কাদের জন্য বইটা?

A year spent in artificial intelligence is enough to make one believe in God.

– Alan Perlis

*

১. যারা টেকনিক্যাল ফিল্ডে কাজ করেন, যাদের নতুন প্রযুক্তিতে প্রচন্ড আগ্রহ, নতুন প্রযুক্তি দিয়ে নতুন কিছু করতে চান যারা। পাশাপাশি যারা নতুন স্কিল সেটের চাকরির বাজার খুঁজছেন - নিজেকে আপডেট রাখতে। প্রযুক্তির সাথে। তাছাড়াও যারা নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে দুনিয়াকে পাল্টাতে চান, সেসব স্টার্টআপদের জন্য জরুরী এই মেশিন লার্নিং।

২. যারা নন-টেকনিক্যাল ফিল্ডে কাজ করেন, যাদের প্রথাগতভাবে টেকনিক্যাল ফিল্ডে কাজ করার সুযোগ কম, মার্কেটিং অথবা সেলস নিয়ে কাজ করছেন অন্য ভার্টিকেলে, নিজস্ব ফিল্ডে দক্ষতা বাড়াতে চান যারা এই নতুন প্রযুক্তি দিয়ে, তাদেরকে লক্ষ্য করে লেখা হয়েছে এই বইটা। আমার ধারণা মতে, আইসিটির বাইরে মেশিন লার্নিং নিয়ে কাজ হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। বড় বড় মেশিন লার্নিংয়ের প্রজেক্টগুলো এখন চলছে বেশি হেলথকেয়ার সেক্টরে। সার্ভিস ইন্ডাস্ট্রিতে হেল্পডেস্ক উঠে যেয়ে সেখানে বসছে "চ্যাটবট"। কোন শাড়ি কিনবো সেটা জানতে তো দরকার হচ্ছে না আইসিটির মানুষ। "চ্যাটবট"ই বলে দিচ্ছে আপনার ক্যারেক্টার অ্যানালাইসিস করে। উঠে যাচ্ছে ড্রাইভার, গাড়ি চলবে নিজের আহরণ করা জ্ঞান দিয়ে। একটা কথা বলবো চুপি চুপি? আমার দেখামতে দুনিয়া তোলপাড় করা ডাটা সাইন্সের বাঘা বাঘা মানুষগুলোর খুব কমই এসেছেন কম্পিউটার 'রিলেটেড' ফিল্ড থেকে।

কারণ? বলবো পরের বইয়ে।

আর,

৩. যারা আমার মতো অলস, যারা তাদের জীবনের প্রতিটা কাজ করাতে চান ‘মেশিন’ মানে ‘অটোমেশন’ দিয়ে। যারা ভাবেন পৃথিবীতে মানুষ এসেছে বড় কিছু করার ধারণা নিয়ে, এবং ধারণা করেন পৃথিবীর সব বড় সমস্যাগুলোকে সমাধান করা সম্ভব প্রযুক্তির সুবিধা নিয়ে। যারা সবকিছুতেই ‘অপটিমাইজেশনে’ বিশ্বাসী, যারা ছোট্ট একটা প্রসেস থেকে ১০ সেকেন্ড বাঁচানোর জন্য সময় দেন বছরখানিক। কারণ, একটাই। আমি পারলে মেশিন পারবে না কেন? পারতেই হবে। আর সময় পেলে কাজ "অফলোড" করে দেবো মেশিনের কাছে। মানুষের কাজ অনেক বাকি।

নিজের একটা গল্প বলি বরং। গল্পের বই নিয়ে মশারিতে ঢোকার পুরনো অভ্যাস আমার। ঘুমিয়ে যাবার আগে রিমোট দিয়ে লাইট বন্ধ করতাম অনেক বছর আগে। এরপর বলতাম মুখে। ভয়েস অ্যাক্টিভেটেড। বন্ধ হয়ে যেত লাইট - মশারির ভেতর থেকে। দেখা গেলো - মাঝে মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ি লাইট না অফ করেই। ওই বিদ্যুৎ অপচয় থেকে বাঁচতে লেগে গেলাম কাজে। বছরখানেক ধরে। আমার হাতের 'ফিটবিট 'ঘড়িটা কিন্তু জানে আমি কখন চোখ বন্ধ করেছি, মানে ঘুমিয়ে পড়েছি। সেটা সে বোঝে তার হার্টবিট সেন্সর থেকে। আমার কথা হচ্ছে 'ফিটবিট' যদি বুঝতে পারে আমার ঘুমিয়ে যাওয়ার সময়টুকু, তাহলে সেটা কিন্তু ট্রিগার করতে পারার কথা আমার লাইটের সুইচকে।

এবং,

৪. যারা ভাবেন পৃথিবীর সব সমস্যার পেছনে রয়েছে মানুষের সিদ্ধান্তহীনতা। এটা ঠিক যে, মানুষের বিভিন্ন ‘বায়াসে’র কারণে প্রতিবছর নষ্ট হচ্ছে কোটি কোটি টাকা, বিভিন্ন অর্গানাইজেশনগুলোতে। টাকা নিয়ে চিন্তা করেনা হয়তোবা অনেক অর্গানাইজেশন। তাদের সমস্যা অন্য জায়গায়। অপুর্চুনিটি লস্ট। ভুল সিদ্ধান্তের কারণে বোয়িং 'গ্রাউন্ডিং' করে রেখেছিলো শত শত বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার। এভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রির মতে "এয়ারক্রাফট ইজ এক্সপেন্সিভ হোয়েন ইট ইজ গ্রাউন্ডেড।" স্যামসাঙ বুঝেছে তার নোট ৮ দিয়ে। তথ্য নির্ভর সিদ্ধান্ত হলে সেই ব্যাটারি কোয়ালিটি চেক পাস করতো না প্রথমেই। কাজ করেছে মানুষের 'বায়াস'। কিচ্ছু হবে না বলে ডেডলাইন ধরতে গিয়ে তাদের এই অবস্থা।

অথবা ধরুন, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলওয়ে লাইন? কেন সিদ্ধান্ত হয়নি আগে? নষ্ট হলো কতোগুলো বছর। অথবা, ঢাকার পাবলিক ট্রানজিট সিস্টেম? টাকা থেকে বেশি নষ্ট হয়েছে অনেক অনেক "অপুর্চুনিটি"। আমাদের সবার নষ্ট হয়েছে হাজারো কোটি ঘন্টা। জ্যামে বসে। বন্যার পানিতে ভেসে। আমার ডাটা বলে - সরকারি অফিসে সিদ্ধান্ত দিতে ভয় পায় সবাই। বসে থাকে সিদ্ধান্তের জন্য। যেটা আসবে ওপর থেকে। কেন? যদি, না হয় কাজটা? গচ্চা দেবে কে? সেখানে সিদ্ধান্ত দেবার সমস্ত উপাত্ত দেবে মেশিন লার্নিং, আগের শিক্ষা থেকে। ভয় থাকবে না আর কারো।

ডাটা মিথ্যা বলে না। আসল ফ্লাইওভারটা হবে কোথায় - সেটা জানাবে মেশিন লার্নিং - পেছনের ট্রাফিক আর সামনের ২০ বছরের 'প্রজেক্টেড' ডাটা থেকে। নদীর বাঁধটা কবে মেরামত লাগবে সেটা আগে থেকে বলবে ডাটা। একটা এলাকায় কতগুলো স্কুল দরকার পড়বে ২০৩০ সালে - সেটাও আসবে প্রেডিক্টিভ অ্যানালাইসিসে। পরের বন্যাটার জন্য কতোটুকু প্রস্তুত আমরা? কতো পানি লাগবে আমাদের ইরিগেশন সিস্টেমে - সামনের বছরগুলোতে? আমাদের ইমিগ্রেশন বা ন্যাশনাল ইডেন্টিটি ডাটাবেজে কতো "অ্যানামলি" মানে অসঙ্গতি আছে সেটাও জানা যাবে আগে। কতো মানুষ সামনের বছরগুলোতে দেশের বাইরে যাবে - কতো টাকা দেশে আসবে - সেটাও জানা যাবে বাজেট প্রণয়নের আগে।

আমরা দেখেছি - তথ্যের উপর ভিত্তি করে অথবা তথ্যনির্ভর সিদ্ধান্তগুলো সমস্যা করে কম। আর সেকারণেই ‘ডিসিশন সাইন্সে’র এর মত ব্যাপারে ঢুকে গেছে মেশিন লার্নিং। মানুষ সিদ্ধান্ত নেবে সব শেষে, সেটাই স্বাভাবিক। তবে, সিদ্ধান্তগুলোকে ঠিক ধরণের ‘ম্যাচিউরিটি’ দেবে আমাদের পেছনের ডাটা। তখন, সিদ্ধান্ত নিতে কম ভয় পাবেন সবাই। এই ‘ইনফর্মড ডিসিশনে’র পেছনে থাকছে ‘মেশিন লার্নিং’ এর বড় কাজ। এর থেকে মজার ব্যাপার হচ্ছে ওই সিদ্ধান্ত নেবার ১০ - ২০ বছর পর কী হবে সেটারও ‘প্রেডিক্টিভ অ্যালালাইসিস’ করে দেবে আমাদের এই মেশিন লার্নিং।

শিখছেন তো মেশিন লার্নিং?

Last updated