১.২. ইন্টারকানেকশন কস্ট মডেলিং

A point of view can be a dangerous luxury when substituted for insight and understanding.

-― Marshall McLuhan, The Gutenberg Galaxy: The Making of Typographic Man

*

মনে আছে বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগের অবস্থা? শুরুর দিকে? প্রথমে ছিলো শুধু টিঅ্যান্ডটি। বেসরকারী আর বেশকিছু বাইরের কোম্পানি প্রবেশাধিকার পেল নব্বইয়ের দিকে। প্রাইভেটাইজেশন নিয়ে এসেছে দক্ষতা আর কম টাকায় কথা বলার নিশ্চয়তা। এটা ঠিক যে খরচ কমানোর জন্য যথেষ্ট পরিমান প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরী আর সরকারের রেগুলেটরি জ্ঞান না থাকার কারণে দাম চড়া ছিলো প্রথম দিকে। রেগুলেটরও কাজ করতে পারেনি ঠিকমতো – শুরুর দিকে।

আমাদের মোবাইল অপারেটরগুলো এ ঝামেলায় পড়েছিলো বটে। ল্যান্ড লাইনে সংযোগ না পাবার কারণে আন্তসংযোগ ছাড়াই চালু করেছিল মোবাইল সার্ভিস। অথচ, নীতিমালা বলেছে সার্ভিসে যাবার তিন মাসের মধ্যে কোম্পানিগুলো নিজেদের মধ্যে কল আদান প্রদান করার চুক্তি করার কথা। মানে, প্রয়োগ ছিলো না নীতিমালার। সরকারী কোম্পানিকেও বাধ্য করা হয়নি ওসময়ে। ক্ষতি হলো কার? গ্রাহকদের। কিনতে হলো জোড়ায় জোড়ায় ফোন। মানে, জিপি টু জিপি। অথবা বাংলালিংক টু বাংলালিংক। মাথা কুটলেও কল যেতো না ল্যান্ড নেটওয়ার্কে। তার ওপর সাত টাকা প্রতিমিনিট। হারালো মানুষ তার একটা নাগরিক অধিকার। যেকোন ফোনে কথা বলার অধিকার। লিখেছিলাম এটা নিয়ে প্রথম-আলোতে। সেই দুহাজার পাঁচে। বিটিআরসিতে যাবার দুবছর আগে। কে জানতো আমাকেই যেতে হবে ওখানে? এই আন্ত:সংযোগ নিয়ে কাজ করতে।

দেশের সবচেয়ে বড় ডাটার এই এক্সারসাইজটা করতে হয়েছিল এই আন্তসংযোগ রেট নির্ধারণ করতে গিয়ে। সময় লেগেছিলো পুরো আড়াই বছর। এক অপারেটর থেকে আরেক অপারেটরে হোলসেলে কতো পয়সাতে আপনার কলটা পাঠাতে পারবে সেটার একটা কস্ট মডেলিং। ওখানে কোন লাভ নয় - বরং আসল খরচের ভিত্তিতে। ‘ডিউ-ডিলিজেন্সে’র মতো এটাই টেলিযোগাযোগ রেগুলেশনের সবচেয়ে বড় কমপ্লেক্স আন্ডারটেকিং। অনেক বিপত্তির মুখে শুরু করেছিলাম আমরা। আবার কোম্পানিগুলোর অদক্ষতার কারণে আপনার ফোন বিল বাড়লো কি না সেটাও দেখে এই এক্সারসাইজ। প্রতিটা অপারেটরদের লক্ষাধিক ইনপুটের ওপর বের করা হয় একটা কল্পিত 'দক্ষ' অপারেটর। তার কল রেট কতো হওয়া উচিত সেটা আসে ওই এক্সারসাইজ থেকে। গ্রাহকস্বার্থের সাথে যায় বলে অনেক দেশের টেলিযোগাযোগ রেগুলেটর এটা না করলেও 'গ্রাহকস্বার্থ বা প্রতিযোগিতা এজেন্সী' জিনিসটা করে নিয়মিত। আর তিন বছরের মতো সময় লেগেছিলো এটাকে বের করে আনতে। বাংলাদেশে ব্যাপারটা হয়েছে মাত্র একবারই!

তখনি দেখেছিলাম ডাটার ক্ষমতা। অসীম। জনস্বার্থে ডাটার ক্ষমতা। ডাটা হচ্ছে 'গ্রেটেস্ট ইকুয়ালাইজার'। ফোনের বিলের আসল খরচের হিসেবটা। গ্রাহকের পকেট কেঁটে নয়। এদিকে যেমনটা করেছে ইন্টারনেট। ভেঙ্গে একাকার করে দিয়েছে জ্ঞানের ভান্ডার। শুধুমাত্র যারা বিদেশ পাড়ি দিতে পারে তাদের জন্য নয়। ভেঙ্গে একাকার করে দিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল কলের ক্যাপটিভ মার্কেট। ওই সময় ডাটা অ্যানালাইসিসে যা প্রজ্ঞা মানে 'ইনসাইট' দেখেছিলাম সেটা এখনো করতে পারিনি দেশের জন্য।

হয়তোবা পারবো একদিন। দেশ তো কম ইনভেস্ট করেনি আমাদের পেছনে!

Last updated