টার্গেটের গল্প

বই কিনতে গেলে আমাজনের বিকল্প নেই। এখনো। বিশেষ করে বাইরের বই। ওদের ‘রেকমেন্ডেশন’ ইঞ্জিন আমার মাথা থেকেও ভালো। আমি কি চাই, সেটা আমার থেকে জানে ভালো ও। নতুন কি কি কিনতে চাই সেটা প্রেডিক্ট করে। একদম মনের মতো করে। পনেরো বছর ধরে অ্যাকাউন্ট থাকাতে আমার খুঁটিনাটি জানে সে। ‘ক্রিপি’ মনে হতে পারে – মাঝে মধ্যে এমনিতেই ঢু মারি এই আমাজনে। কিছু কিনতে নয়, বরং ওর কারুকাজ দেখতে। কিভাবে অবাক করে সেটা দেখতে। এটাও একটা খেলা, ফেসবুকিং থেকে অনেক মজার। পনেরো বছরের হিস্ট্রি তো কম নয়। এই শপিং হিস্ট্রি নিয়ে মজার একটা ঘটনা হয়েছিলো শপিং চেইন টার্গেটে। পনেরো বছর আগে। জানেন বোধহয় ঘটনাটা, কি বলেন?

এটাও ১৭ বছর আগের ঘটনা। মিনিয়াপলিসের একটা শহরে। টার্গেটের দোকানে এসে হাজির রাগী এক বাবা। ‘ডাকো ম্যানেজারকে’ বলে হুঙ্কার দিলেন উনি। ম্যানেজার চলে এলেন দৌড়াতে দৌড়াতে। ‘দেখো কি পাঠিয়েছ তোমরা? বাসার মেইলে।’ বলে কাগজগুলো দেখালেন বাবা। বলে রাখি, বড় বড় সুপারশপগুলো নানা ধরনের অফার পাঠায় বাসার ঠিকানায়। কখনো বই হিসেবে। কখনো কখনো কুপন। একটা কিনলে আরেকটা ফ্রি স্টাইলে। বিশেষ করে আপনার শপিং হিস্ট্রি ধরে। স্বয়ংক্রিয়ভাবে। মানুষের হাত নেই ওখানে। যেমন, ব্যাট কিনলে বলের অফার পাঠাবে সুপারশপ। অথবা ব্যাটের লাইফ ধরে আরেকটা ব্যাটের অফার।

তো বাবা দেখালেন অফারগুলো যা পাঠানো হয়েছে তার ছোট মেয়েকে। তার ঠিকানায়। ‘এখনো হাইস্কুলে ও। প্রেগন্যান্ট বানাতে চাও নাকি আমার মেয়েকে?’ রাগ চড়লো বাবার। ম্যানেজার হাতে নিলেন অফারগুলো। সব মাতৃত্বকালীন কাপড়চোপড়ের বিজ্ঞাপন। বাচ্চাদের ফার্নিচার। সব জায়গায় বাচ্চাদের হাসিমুখের ছবি। ম্যানেজারের চোখ ছানাবড়া। পা ধরতে বাকি রাখলেন আর কি। মাফ চাইলেন বার বার। অটোমেটেড মেইলারের গুষ্টি উদ্ধার করলেন মনে মনে। বিপদে ফেলে কেউ এভাবে? বাবার মান ভাঙাতে আবার কল দিলেন ম্যানেজার। দুদিন পর। ওপার থেকে বাবার গলা। কিছুটা কুন্ঠিত। ‘মেয়ের সাথে কথা হয়েছে আমার। ব্যাপারটা জানতাম না আমি। এই অগাস্টে ওর ডিউ। দুঃখিত আমি।’

এই ঘটনার পর পরই টার্গেট বাইরের ‘কমিউনিকেশন’ বন্ধ করে দেয় পুরোপুরি। বিশেষ করে – মিডিয়ার সাথে। নিজেদেরও গুটিয়ে নেয় অনেকখানি। এর পেছনে কিছুটা কাজ করেছে ওই মিডিয়া। এতো এতো তথ্য নিয়ে কি করে টার্গেট? গ্রাহকেরাও ক্ষুদ্ধ কিছুটা। ‘প্রাইভেসী’ বলে থাকলো না কিছু আর। ওই ঘটনার দু বছর আগের কথা। নিউ ইয়র্ক টাইমসের ‘চার্লস ডুহিগ’ কথা বলেছিলেন তাদের চীফ ডাটা সায়েন্টিস্টের সাথে। আলাপ করছিলেন হবু ‘বাচ্চা’ কাস্টমারদের নিয়ে। বাচ্চাদেরকে ঘিরেই রয়েছে বিলিয়ন ডলারের কয়েকটা ভার্টিকেলের ইন্ডাস্ট্রি। খেলনা বাদেই। কেই বা ছাড়তে চায় বলেন?

আর সেজন্যই আলাদা করে আছে বেবি রেজিস্ট্রি সার্ভিস। এই শপিং চেইনগুলোর। ওই নতুন ‘বাচ্চা’ কাস্টমারদেরকে ঘিরে। তবে, ওই বাচ্চাটা কবে আসছে পৃথিবীতে – সেটা ট্র্যাক করা যায় ওই মাতৃত্বকালীন সময় থেকে। যেমন ধরুন, লোশন কেনে সবাই। তবে, সুগন্ধি ছাড়া লোশন অর্ডার করছেন ১৩-২০ সপ্তাহের মা’রা। সেটা পাওয়া গেছে হিস্টরিক ডাটা থেকে। ওই বেবি রেজিস্ট্রির সাথে মিলিয়ে। হতে যাওয়া মা’রা প্রথম ২০ সপ্তাহে অর্ডার করেন কিছু ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট। বিশেষ করে – ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম আর জিঙ্ক। যখন অর্ডার পড়ে বেশি করে ‘গন্ধ ছাড়া সাবান’ + তুলার রোল প্যাক, বুঝতে হবে সময় অনেক অনেক কাছে। বাচ্চা কাস্টমারের আসার। এই পৃথিবীতে।

টার্গেট ওই দুহাজার নয়েই বুঝে ফেলতো কে ‘প্রেগন্যান্ট’ আর কে নয়। মেশিন লার্নিং থেকে বুঝে আলাদা করে ফেলেছিলো +/- ২৫ প্রোডাক্ট। এইটার সাথে ওইটা – অথবা ওইটার সাথে এইটা। আবার, এইটা বিয়োগ ওইটা। বেশি হলে এটা। কম হলে আরেকটা। হাজার পার্মুটেশন কম্বিনেশন করে বের করে ফেলেছিলো ওই মা এখন মাতৃত্বকালীন কোন সপ্তাহে। একটা উদাহরন দিয়েছিলো টার্গেট। ধরুন, ‘জেনি ওয়ার্ড’ একজন ‘কল্পিত’ কাস্টমার। বয়স ২৩। থাকে আটলান্টায়। একটা অর্ডার দিলো মার্চে। কোকা বাটার লোশন। সঙ্গে আরেকটা বড় ব্যাগ। সাইজে ঢুকতে পারে দুটো ডায়াপার। ডায়াপার অর্ডারে নেই কিন্তু। পকেট আছে কয়েকটা। ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট নেয়ার মতো। অর্ডারে নেই ভিটামিন। উজ্জল নীল রঙয়ের একটা কাঁথাও ছিলো ওই অর্ডারে। মেশিন লার্নিং বলবে – ৮৭% ভাগ নিশ্চিত মহিলা প্রেগন্যান্ট। তার ‘ডিউ ডেট’ অগাস্টের শেষে। বাচ্চাটা হবে ছেলে।

Last updated