কনটেন্ট মডারেশন - অসুস্থতার যোগসূত্র

Some doors should never be opened.

-- 8mm(film)

প্রশিক্ষণের দ্বিতীয় দিনের ঘটনা। সবার সাথে আলাপ করিয়ে দেবার জন্য ট্রেনিং হোস্ট আমাদের সবাইকে দাওয়াত দিয়েছেন ডিনারের। আমার পাশে বসেছে রিচার্ড। নাম পাল্টে দিলাম কাজের সুবিধার্থে। ওর কাজের জায়গা ফিলাডেলফিয়াতে। কোম্পানিই পাঠিয়েছে এই ট্রেনিংয়ে। এর মধ্যেই আমাকে অনেকগুলো ‘ইনসাইট’ দিয়েছে এই ‘মেশিন লার্নিং’ নিয়ে। বিশেষ করে ‘ফীচার এক্সট্রাকশনে’। মেশিন লার্নিং এর মানবিক দিক থেকে।

একথা সেকথা বলতে বলতে চলে এলো গুগল টিমে কাজ করার কথা। ইউটিউবের ‘কনটেন্ট মডারেশন’। উৎসুক হলাম কিছুটা। ব্যাপারটা একবারে অজানা নয়। তবে তার ‘এক্সটেন্ট’ নিয়ে জানার আগ্রহ ছিলো আগে থেকে। নিকোলাস কেজের ‘এইট মিলিমিটার’ আমাকে ঘুমাতে দেয়নি অনেকদিন। একটা মহিলাকে জ্যান্ত কেটে মেরে ফেলার ভিডিও করার মুভি হচ্ছে এই ‘এইট মিলিমিটার’। একটা ডার্ক ধরণের সিনেমা। মানুষের ওপর বিশ্বাস হারানো আবার ফিরে পাবার একটা ছবি।

আমরা আজকে যেই ফেইসবুক আর ইউটিউব দেখি সেটা অনেকটাই ‘মডারেটেড’। বিটিআরসি’তে থাকার সময় এই ফ্ল্যাগিং এর কিছু কাজ করতে হতো আমাকে। দেশগুলোর নীতিমালা অনুযায়ী এই ব্যাপারগুলো চলে আসছে অনেকদিন ধরে। হয়তোবা আপনি একটা ছবি পোস্ট দিচ্ছেন অথবা ভিডিও আপলোড করছেন সেটা ওই সোশ্যাল মিডিয়ার একটা মডারেশন সিস্টেমের মধ্যে দিয়ে যায়। আপলোড হয় ঠিকই - তবে কেউ না কেউ সেটাকে দেখে দেয় অল্প সময়ের মধ্যে। এতো বিলিয়ন বিলিয়ন ছবি আর ভিডিও? হ্যাঁ, কিছুটা তাই। তবে, যারা সাধারণত: সবসময় ‘সেফ’ কনটেন্ট আপলোড করেন, তাদেরটা কম মনিটর করা হয়। এখানে কিছু অ্যালগরিদম ব্যবহার করা হয় - যাতে সমস্যা তৈরিকারী ব্যবহারকারীদেরটাই মনিটরিংএ যায় আগেভাগে।

‘কনটেন্ট মনিটরিং’ কয়েকটা ‘টায়ারে’ হলেও এই মানুষগুলো (কনটেন্ট মডারেটর) বেশিদিন টিকতে পারে না এই ডিপার্টমেন্টে। খুব বেশি হলে ৩ থেকে ৪ মাস। তারপর, নিজে থেকেই চাকরি ছেড়ে দেন উনারা। প্রতিনিয়তঃ সাইকোলজিক্যাল গাইডেন্সে থাকলেও ওই ভয়ংকর কনটেন্ট নিতে পারেন না বেশিরভাগ মানুষ। একটা লম্বা সময় ধরে একজন অল্পবয়স্ক বাচ্চাকে খুঁচিয়ে মারার ভিডিওর মতো আরো অনেক অনেক অসুস্থ কনটেন্ট দেখতে দেখতে আসল অসুস্থ হয়ে পড়েন কনটেন্ট মডারেটররা। ভিডিওর উৎস খুঁজে বের করার জন্য সাহায্য করতেও দেখতে হচ্ছে এই জিনিস প্রতিদিন। তবে, এই ব্যাপারগুলো অনেক সময় ‘আউটসোর্স’ করে দেয়া হয় ফিলিপাইন বা আমাদের মতো দেশগুলোতে।

এটা ঠিক যে, প্রতিটা কনটেন্ট সরানোর পক্ষপাতি নয় এই কোম্পানিগুলো। যেখানে মানুষের ‘বেসিক’ অধিকার ভুলন্ঠিত হচ্ছে বার বার, সেখানে একটা ‘ওয়ার্নিং সাইন’ অথবা ‘হালকা’ একটা কাভার দিয়ে দেয় কনটেন্ট মডারেটর। তবে যে যাই বলুক, এটা একটা কষ্টের জিনিস। সেখানে সাহায্য করতে আসছে মেশিন লার্নিং। প্রতি সেকেন্ডের ভিডিও ফুটেজ দেখে আগে থেকেই ফিল্টার মানে ফ্ল্যাগিং করে রাখতে পারে অনেকগুলো লেয়ারের ডীপ লার্নিং। মানুষের পক্ষে এই কোটি কোটি কনটেন্ট দেখাও সম্ভব নয়। বিশেষ করে প্রতিদিন নতুন নতুন ব্যবহারকারী যুক্ত হচ্ছেন ইন্টারনেটে।

Last updated