জাহাজ না আইসবার্গ?
Last updated
Last updated
কৃষকদের আত্মহত্যার হার কমাতে স্যাটেলাইট ইমেজ, রিমোট সেন্সিং ডাটা আর ডীপ লার্নিং কিভাবে কাজ করেছে সেটা নিয়ে আলাপ করেছিলাম আরেকটা অংশে। শিকাগো থেকে আমার এক বন্ধু মাস কয়েক আগে জানিয়েছিলেন একটা কম্পিটিশনের কথা। ক্যাগলে। প্রাইজ মানি ৫০ হাজার ডলারের মতো। চেষ্টা করবো কিনা? দৌড়ের ওপর ছিলাম সেই মাসটা। তাই চেষ্টা করতে করতে দেরি হয়ে গেলো মাসখানিক। যখন ঢুকলাম, তখন প্রাইজ পেয়ে গেছে মানুষজন। তাতে কী? চেষ্টা করতে দোষ কোথায়?
সমস্যা দেখেই তো আমি মুগ্ধ! অসাধারণ!
নরওয়েজিয়ান এনার্জি কোম্পানি হিসেবে ‘স্ট্যাটওয়েল’ এর সমস্যা কম নয়। পৃথিবী জুড়ে তাদের যত অপারেশন্স আছে তার মধ্যে বেশিরভাগ অংশ জুড়ে রয়েছে হিমাঙ্কের নিচে থাকা সমুদ্র অংশে। ভুল বলেছি? নরওয়ের ম্যাপ দেখলেই বোঝা যাবে। একদিকে আইসল্যান্ড, গ্রীনল্যাণ্ড - অন্যদিকে খালি বরফ আর বরফ। পৃথিবী জুড়ে যত গ্যাস এবং তেলের ড্রিলিং রিগ দেখা যায়, তার ম্যাসিভ ইনফ্রাস্ট্রাকচারগুলোর বেশিরভাগ অংশ আছে বরফ সাগরগুলোতে।
মনে পড়ে আলাস্কার কথা? অথবা আর্কটিকের তেল উত্তোলনের কথা? সেগুলোর অপারেশন্স দেখলে সবার চোখ উঠবে কপালে। প্রাকৃতিক গ্যাস অথবা তেল উত্তোলনের জন্য এই ড্রিলিং রিগগুলো তৈরিতে খরচ হয় মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার। ক্যানাডায় আমার কয়েক বন্ধু আছেন যারা এখনো অপারেট করছেন বিভিন্ন সাগরে। এই ড্রিলিং রিগে। বেশিরভাগ সময়ে এই ড্রিলিং রিগগুলো সাগরে তার সাপ্লাই বেজ থেকে বেশ কয়েক হাজার মাইল দূরে থাকে। ফলে তাদের এই রিগে যারা থাকেন - তাদের জন্য সব কিছুর বন্দোবস্ত রাখতে হয় বেশ লম্বা সময় ধরে। বলা যায় তাদের থাকা খাওয়া থেকে শুরু করে, সবকিছু।
সাগরের উত্তাল ঝড়, সুনামি, অশান্ত ঢেউ থেকে বাঁচতে একেকটা ড্রিলিং রিগ তৈরি হয় অনেক সময় ধরে। গোড়াটা তৈরি করে আসতে হয় সাগরের তলদেশ থেকে। সময় এবং খরচ দুটো মিলিয়ে এই পুরো ম্যাসিভ ইনফ্রাস্ট্রাকচার এর দাম হয়ে যায় অনেক অনেক বেশি। বরফ সাগরের সবচেয়ে বড় ভয় হচ্ছে পানিতে ডুবে থাকা নিরীহ ধরণের আইসবার্গগুলো। আর সেখানে এসে যদি আইসবার্গ লেগে যায় তাহলে সেই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সেই কোম্পানিগুলোর মাথা খারাপ হয়ে যায়।
মনে আছে “টিপ অফ দ্যা আইসবার্গ” ব্যাপারটার কথা? তাই নয় কী? এর মানে হচ্ছে - আইসবার্গের ছোট্ট অংশটুকুই ভেসে থাকে, যেখানে বেশিরভাগ ডুবে থাকে পানির ভেতরে। ছোট্ট মাথার নিচে কতোবড় একটা আইসবার্গ থাকতে পারে সেটার ধারণা করার কোন উপায় নেই আগে থেকে। একরাতে তার ট্রাভেল করার অনেক রেকর্ড আছে এনার্জি কোম্পানিগুলোর কাছে।
ধরুন, সেই আইসবার্গ ভেসে এসে যদি একবার বাড়ি খায় এ ধরনের একটা রিগের ইনফ্রাস্ট্রাকচারের সাথে - তাহলে সেই কোম্পানিসহ শেয়ারহোল্ডারদের সবারই খবর আছে। সেদিক থেকে গ্রীনল্যাণ্ড, আইসল্যান্ড, নরওয়ে মানে স্ক্যান্ডেনেভিয়ান দেশগুলোর পাশাপাশি সাগরগুলোতে যেই রিগগুলো থাকে - সেগুলোর একটা বড় ভয় থাকে আইসবার্গের সাথে বাড়ি খাওয়া নিয়ে। তেল গ্যাস এক্সপ্লোরেশনের জাহাজগুলোর একই সমস্যা। কখন কোথায় লাগে। বিশেষ করে আইসবার্গে।
প্রথাগতভাবে এই ধরনের বিপদজ্জনক আইসবার্গগুলোকে আগে থেকে চেনার জন্য স্যাটেলাইট ইমেজিংএর মতো বেশ কিছু উন্নততর প্রযুক্তি কাজ করছে অনেকদিন ধরেই। সমস্যা হচ্ছে স্যাটেলাইট ইমেজিং ভালো - তবে দিনের বিভিন্ন সময়ে কুয়াশা, রাতের আঁধার, বৃষ্টি আর মেঘের ভেতর দিয়ে দেখতে হয় তাদের। পাশাপাশি তাদেরকে উড়তে হয় পৃথিবী থেকে ৬৮০ কিলোমিটার ওপর দিয়ে। সেকারণে দিনে ১৪ বার চক্কর দিতে হয় পৃথিবীর ওপর দিয়ে। একই জায়গা দিয়ে।
স্যাটেলাইট যে প্রযুক্তির ব্যবহার করছে সেটাকে আমরা বলছি ‘রিমোট সেন্সিং’। এর মাধ্যমেই আসলে আমরা ‘ডিটেক্ট’ করতে পারি সাগরের জাহাজ, বড় বড় সাগরের প্রাণী, আর এই দুষ্ট আইসবার্গগুলোকে। সেন্টিনেলের যে স্যাটেলাইট কন্সটেলেশন আছে সেটাই আসলে ব্যবহার করা হয় সমুদ্র এবং ভূমির এই বিভিন্ন অপারেশন। যেমন এর আগে দেখেছিলাম শস্যের রং দেখে কি কি ফলন হয়েছে এবার? আগেই বলেছি অ্যাক্যুরেসি রাখতে এই দুটো স্যাটলাইট প্রতিদিন পৃথিবীকে পাড়ি দেয় চোদ্দবার। মানে, বাকি রাখে না কোন জায়গা।
এখন আসি আমার নিজের বিষয়। মানে কমিউনিকেশন। এই স্যাটেলাইটগুলোর সাথে আছে সি ব্যান্ডের “সিনথেটিক অ্যাপারচার রাডার” যেটা আসলে তার ফ্রিকোয়েন্সি দিয়ে সব ধরনের আবহাওয়া থেকে শুরু করে অনেককিছুই মনিটর করতে পারে সে। বুঝতেই পারছেন - অত্যাধুনিক স্যাটলাইট - সেটাতে সমস্যা নেই। তবে, সমস্যা হচ্ছে সে যে ছবিগুলো তুলছে সেখান মানুষের বোঝার ক্ষমতা নেই যে সেটা আইসবার্গ, তিমি নাকি জাহাজ? আমি যেকোন একটা অবজেক্টের কথা বলছি যেটা সাগরে ভেসে বেড়াচ্ছে। দিন রাত। নিচে কয়েকটা ছবি দিচ্ছি বরং। বেশি কাহিনী হয়ে গেল? আসলেই সমস্যা। এই 'HH' আর 'HV' এর গল্পে আসছি পরে।