ইকুয়ালাইজেশন কেন?

গান শুনি অনেক দিন ধরেই। ছোটবেলায় রক আর পপ দিয়ে দিয়ে শুরু করার কারণে ‘ইকুয়ালাইজেশনে’র প্রভাব থেকে মুক্ত করতে পারিনি নিজেকে। মাঝখানে ‘ব্লু-গ্র্যাস’ জনরা শুনলেও মিড কিছুটা ওপরে উঠেছে ঠিকই, তবে ‘ভি-শেপড’ ইফেক্ট থেকে মুক্তি পাইনি। গান শুনবো, একটু কালারেশন না হলে কেমন হয় জিনিষটা? এখন তো দেখছি ভুল শুনেছি এতোগুলো বছর। অনেক কটা বছর। তবে এটা ঠিক, তখনকার আমলে স্পিকারগুলোও পারতো না ওই ধরনের মানে ষ্টুডিও কোয়ালিটি সাউন্ড রিপ্রোডাকশনে। আর - ৭০য়ের পপ কালচারটাই ছিলো ওই সাউন্ড সিগনেচারকে ঘিরে। আর সেকারণে এই ‘ভি-শেপড’ ইকুয়ালাইজেশনের আমদানি। মনে আছে আমাদের ক্যাসেট প্লেয়ারগুলোর কথা? ট্রেবল আর বাস ছাড়া বাকি নব সব গায়েব। সব দোষ ওদের!

তো ‘ভি-শেপড’ আবার অনেকের মতে এই ‘ভি-কার্ভের’ কাহিনী কি? গান শোনার পুরো স্পেকট্রাম ব্যান্ডটাকে এনালাইসিস করি বরং। আমরা শুনি ২০ হার্টস থেকে ২০ হাজার হার্টস পর্যন্ত। শুরুর দিকের হার্টসগুলো ‘লো’ এন্ড তবে মানুষ এই রিজিওনটা পছন্দ করে অনেক। ছবি দেখুন, ৩২ থেকে ৬২-৬৪ হার্টসের ইকুয়ালাইজেশনে নব ওপরে ওঠানো। যে যাই বলুক, ইকুয়ালাইজেশনের কাজ হচ্ছে আপনার আমার মিউজিক সিস্টেমের সীমাবদ্ধতাকে কমপেনসেট করতে। ভুল বললাম কি?

কম রিসার্চ হয়নি এটা নিয়ে। বিভিন্ন ধরনের শব্দ শুনিয়ে সেটার আউটপুট নেয়া হয়েছে মানুষের ব্রেইন স্ক্যান থেকে। লোয়ার রিজিয়নের শব্দগুলোতে মানুষ পছন্দ করে তার রিদমের কারণে। মানুষের মাথা এতোটাই পছন্দ করে রিদমকে - যখন সে বসে থাকে অবসরে, পা দোলায় সে, মাথা ঝাঁকায় - টেবিলে টুক টুক পরে বিট তোলে। ভুল নয় কিন্তু। মনের অজান্তেই করে সেটা মানুষ। ড্রামবিট থেকে পিয়ানোর নিচের পার্ট সব কিন্তু ওই লোয়ার রিজিয়নে।

আমাদের আগের ছবিটা দেখলে একটু পরিস্কার হবে মনে হয়। এটা কম্পিউটারের ‘আইটিউনস’ প্লেয়ার থেকে নেয়া। প্রায় সব ধরনের মিউজিক প্লেয়ারে থাকে এই জিনিস। ফোনের প্লেয়ারগুলোও ইদানিং ভর্তি এই জিনিস দিয়ে। ছবির এটা একটা দশ ব্যান্ডের গ্রাফিক ইকুয়ালাইজার। পাঁচ ব্যান্ডেরও হতে পারে। আবার হতে পারে শত নবের এই একই জিনিস। ভালো করে খেয়াল করলে দেখবেন, লোয়ার রিজিয়নের ৩২ আর ৬৪ হার্টজ একটু ওপরে ওঠানো। এটাই সাউন্ডের ‘বাস’ সিগনেচার। ড্রামের কাজ এখানে।

মাঝে ২৫০ হার্টজ থেকে ৪০০০ হার্টজ (৪ কিলোহার্টজ) একটা বিশাল রেঞ্জ। এখানেই থাকে মানুষের গলা। প্রায় সব ইনস্ট্রুমেন্টই পড়ে এখানে। বিশাল রেঞ্জ বলে এটার কারুকাজ অনেক বলে এর দায়ভারও অনেক। গান ভুলভাবে শুনলে সেটার দায়ভার এসে পড়ে এই বিশাল অংশে। এই রেঞ্জটাকে ঠিকমতো রিপ্রেজেন্ট না করলে বিপর্যয় হয় দুনিয়াব্যাপী। হয়েছেও তাই। ওদিকে ৮ থেকে ১৬ কিলোহার্টজ পড়ছে ‘ট্রেবল’ রিজিয়নে। যতো তীক্ষ্ণতা তার সব এখানে। হাই ফ্রিকোয়েন্সিতে যা হয় আর কি। আমাদের ‘টুইটার’ কাজ করে এখানে। এই রেঞ্জে।

আমাদের ছোটবেলার ক্যাসেট প্লেয়ারে ফিরে যাই এবার। ‘মনো’ আর ‘ষ্টিরিও’ নব ছাড়াও আরো দুটো নব দেখা যেতো বেশি করে। মনে আছে তো? ঠিক বলেছেন, ‘বাস’ আর ‘ট্রেবল’। ‘বাস’ বাড়ালে গুম গুম করতো ঘর, আর ট্রেবলে ‘ছিন’ ‘ছিন’ শব্দ। ওই সময়ে স্পিকারগুলোর পারফরমেন্স অতোটা ভালো না হবার কারণে এই আলাদা ইকুয়ালাইজেশন। এটা ঠিক যে - যতো বেশি শুনবেন গান, ততোই বুঝতে পারবেন দুটো জিনিস। মিউজিক সিস্টেমের দুর্বলতা ঢাকতে দরকার ইকুয়ালাইজেশন। আসল একটা সিস্টেমে বিশেষ একটা গান শোনার পর আপনি জানেন ওটার আচরণ।

ধরুন, ওই গানটাই আবার শুনছেন নতুন আরেকটা সিস্টেমে। তখন যদি মনে হয় “আহা - গানটা কেমন জানি বেশি ‘ব্রাইট”, তখন ট্রেবলটা কিছুটা কমিয়ে দিলে ওই আসল সিস্টেমের ‘মতো’ শোনা গেলে কমে যাবে আপনার মনের উশখুঁশ। এখানে আসল সিস্টেমের ‘মতো’ শোনানোর চেষ্টা করতে পারে এই ইকুয়ালাইজেশন, যদিও আসল জিনিস দিল্লীর মতো বহুদূর। চিনি আর স্যাকারিনের মতো। আর এই আসল সিস্টেম হচ্ছে আমাদের জন্য একটা ‘রেফারেন্স’।

মজার কথা, এটার নামও ‘রেফারেন্স সিস্টেম’। ষ্টুডিওতে যখন গানটা তৈরী হয়, তখন সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারকে জানতে হয় আপনার আমার ঘরে আছে কি জিনিস। একেকজনের কাছে গান শোনার একেক যন্ত্র। পাগল হবার কথা ওই সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারের। তবে আসল পাগল হবার আগে সে জেনে নেয় স্টুডিওতে যে যন্ত্রপাতি আছে সেটা বাস্তবের নিরিখে কতোটা কাছাকাছি। ধরুন, * আমি গান গাইছি খোলা গলায়, রেকর্ডিংয়ের পর এটা কতোটা কাছাকাছি শোনায় সেটা দেখতে হবে মনিটরে। অথবা, আমাদের মনিটর স্পিকারে। ‘মনিটর’ জিনিসটা ওই খোলা গলায় যেমনটা শোনা গেছে সেটা ঠিকমতো ‘মনিটর’ করতে ওই মনিটর হেডফোন বা স্পিকার।

Last updated