হেডফোন অ্যাম্পলিফায়ার

এখন আমি বুঝতে পারছি কিছুটা, কেন দরকার হেডফোন অ্যাম্পলিফায়ার। অসাধারণ সাউন্ড ডিটেলস। শুনিনি আগে। শুনছিলাম জ্যাকসন ব্রাউনের পুরোনো অ্যালবাম "আই অ্যাম এলাইভ।"

গানের মধ্যে অসাধারণ ডিটেইল ঠিকমতো আনতে এর জুড়ি নেই।

হেডফোনের জন্য যে অ্যাম্প মানে অ্যাম্পলিফায়ার লাগে সেটা দেখতাম আমাজনে। অথবা ‘হেড-ফাই’তে। মাঝে মাঝে। ‘অডিওফাইল’ গ্রেডের হেডফোন কিনলাম বহু রিসার্চ করেই। দুহাজার সাতে। দুশো বিশ ডলার। নাম বলছি না এমুহুর্তে। বছর কয়েক পর আপগ্রেড করলাম আরেকটা নতুন হেডফোন দিয়ে। এবার প্রায় চারশো ডলার দিয়ে। যে শোরুম থেকে শুনে কিনেছিলাম সেখানে আমার সোর্স থেকে ওরা অ্যাম্প দিয়ে বের করে দিয়েছিলো হেডফোনে।

আমি যখন হেডফোন কিনি তখন যে কয়েকটা গান দিয়ে টেস্ট করি সেগুলো সবসময় থাকে আমার সাথে। হোটেলে ফিরেই দেখলাম কোথায় হারিয়ে গেলো সেই জাদু। কোথায় সেই পাগল করা ডায়নামিক রেঞ্জ? ধারণা ছিলো, সোর্সের ভলিউম যেখানে তিন দিলেই চলে - সেখানে হেডফোনের জন্য দরকার কেন আলাদা অ্যাম্পলিফায়ার? খুব ‘লো’ ভলিউমে শুনি আমি। দশের মিটারে তিন অথবা আড়াই।

ভুলের ভেতর ছিলাম ওই তিন তিনটা বছর। খুঁজি এই হেডফোন, ওই হেডফোন। বাড়াই বাজেট হেডফোনে। ভরে না মন। ফেলে দিলাম সব ‘এমপিথ্রি’। সব। আপগ্রেড করলাম মিউজিক সোর্স ফাইল। ফিরে এলাম দুনিয়া কাঁপানো ‘আন-কম্প্রেসড’ লস-লেস ফরম্যাটে। দুহাজার দশে। ফ্ল্যাক। ১৬ বিট, স্যাম্পলিং রেট ৪৪.১ কিলোহার্টজ। সোজা কথায়, সিডি কোয়ালিটি। প্রতিটা গানের সাইজ দাড়ালো চল্লিশ মেগাবাইটের কাছাকাছি। আমার সোর্স হচ্ছে নামকরা সব ফোন, ভালো ব্র্যান্ডের ল্যাপটপ। রিসার্চে নামলাম নতুন করে। দেখি গলদ গোড়ায়। করেছি কি আমি এতোগুলো বছর!

গান শোনার কথা বললে - আমাদের একটা বড় সময় কাটে মোবাইলে গান শুনে। বলতে বাধা নেই - মোবাইল জিনিসটা একধরনের ‘কনভিনিয়েন্স’ দিয়েছে আমাদের সবার জীবনে। আগে দেখেছিলাম টু-ইন-ওয়ান, রেডিও আর ক্যাসেট প্লেয়ার। এরপর এলো ‘থ্রি-ইন-ওয়ান’। এসে লাগলো টিভি। দেখেন নি? এক ‘চ্যাসি’তে রেডিও, ক্যাসেট প্লেয়ার আর টিভি। সব হচ্ছে ‘কনভিনিয়েন্স’য়ের গল্প। তবে, এগুলো হচ্ছে ‘কাজ’ চালানোর জন্য তৈরি। মানে, কোনটাই ‘স্টেট অফ দ্যা আর্ট’ না বরং চলার মতো করে বানানো।

এখন এসেছে মোবাইল ফোন। আচ্ছা, কি করা যায় না এটা দিয়ে? আমার টিভি’র রিমোট থেকে শুরু করে বাসার লাইট ফ্যান চালানো, বন্ধ সব করি এই জিনিস দিয়ে। কি সেন্সর নেই এতে? হাজারো সেন্সর। তবে সেটার ডাউনসাইড একটাই। সব কাজের কাজি, তবে সব কিছুতে মাতব্বরি নয়। গান শোনা যাবে ঠিকই, তবে ‘অডিওফাইল’ গ্রেডে নয়। বেশিরভাগ সময়ে, সাধারণ মানেরও নয়। এর কারণ আছে অনেকগুলো। এতো ছোট জায়গায় অনেক অনেক সার্কিট বসানোর ফলে ইলেক্ট্রো-ম্যাগনেটিক রেডিওওয়েভ আর অডিও ‘ইন্টারফিয়ারেন্স’ চলে আসে ওগুলোর সীমার বাইরে। আর আমাদের যেহেতু এই অডিও ফ্রিকোয়েন্সি নিয়ে কাজ কারবার, এটার ‘ইফেক্ট’ যায় বহুদূরে। তবে, বিপদ অন্যখানে।

ধরুন, আমি ফোন ম্যানুফ্যাকচারার। বিশটা ফিচার যোগ করছি নতুন ফোনে। রিলিজ হবে পরের বছর। ক্যালিফোর্নিয়াতে বসে করলাম ওটার ডিজাইন। টপ অফ দ্য লাইন। ওই বিশটা ফিচার দেবে দশটা চিপ ম্যানুফ্যাকচারার। কস্ট মডেলিংয়ে সব কিছুর ‘বিল অফ ম্যাটেরিয়াল’ নিয়ে বসতেই মাথা খারাপ। ইউনিট প্রাইসিংয়ে প্রতিটার দাম গিয়ে দাড়াচ্ছে প্রায় হাজার ডলারে। বসলাম আবার সবার সাথে। দেন দরবারে। ওই দশ চিপ ম্যানুফ্যাকচারারের মধ্যে চারজন পারলো না কমাতে দাম। ওই লেভেলে। যে লেভেলে চাইছে আমাদের ফোন কোম্পানি।

ওদের মধ্যে তিনজন এসে বললো তাদের নতুন কিছু চিপের কথা যেটার একেকটাই কাভার দেবে তিন চারটা করে ফিচার। ভালো। ঝরে গেলো সাত নামিদামি চিপ ম্যানুফ্যাকচারার। ওই তিনজন মিলে সব ফিচার দিতে গিয়ে সবকিছুর ‘সাব অপটিমাল’ ভার্সন চলে এলো ফোন কোম্পানির মর্জি ধরে। মজার কথা, এই কস্ট কাটিংয়ে সবচেয়ে আগে পড়ে অডিও আউটপুটের ফোনের ওই সাউন্ড কার্ড। কারণ, কয়জন ‘অডিওফাইল’ই বা শুনবে ফোনে গান?

মনে আছে পুরনো দিনের কথা? পিসিতে ‘অনবোর্ড অডিও’ তো এলো এই কিছুদিন আগে। পিসি মানে ওর মাদারবোর্ডে ছিলো না কিছুই। আলাদাভাবে কিনতে হতো ভিজিএ, সাউন্ড কার্ড। সে সবকিছুর জন্য ছিলো ডেডিকেটেড প্রসেসর। আলাদা আলাদা করে। প্রসেসরের শক্তি বাড়ার সাথে সাথে ওই কাজগুলো চাপিয়ে দেয়া হলো ওই সবেধন মনি প্রসেসর আর মেমরির ওপর। সবকিছু শেয়ার্ড। এতে সব কাজের কাজি প্রসেসর করে সবকিছুই - তবে যতটুকু না করলে নয়। আর সেকারণে অনবোর্ড সাউন্ড বোর্ড আর যাই হোক, ভালো গান শোনার যন্ত্র নেই আর। হাজারো ইলেকট্রনিক চিপ চলে এসেছে এক বোর্ডে।

এদিকে প্রতিটা অন-বোর্ড চিপের কাছাকাছি ব্যাপারটা ‘ইন্টারফিয়ারেনস’ বাড়িয়ে আসলে কমিয়ে দেয় অডিওর মান। যারা অডিও নিয়ে কাজ করেন তারা জানেন ‘যথার্থ’ পাওয়ার সাপ্লাই কতোটা জরুরি। অডিও সিস্টেমের পাওয়ার সাপ্লাই একটু ওলট পালট করলে সেটা ‘অ্যামপ্লিফিকেশনে’ কতোটা ঝামেলা করে সেটা ভুক্তভোগীরাই জানেন ভালো। আমি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে কিনেছিলাম ‘অ্যামপ্লিফায়ার একটা। চলতো ১১০ ভোল্টে। যতোই পাওয়ার শেপ করি না কেন ২২০ ভোল্টে, একটা নয়েজ থাকতো ওর অ্যামপ্লিফিকেশনে। পরে ফেলেই দিয়েছিলাম একরকম। আমাদের পিসির পাওয়ার সাপ্লাইকে তৈরি করতে হয় হাজারো ভোল্ট। আলাদা করে। তো বুঝতেই পারছেন অডিওর অবস্থা কি।

Last updated