অডিওফাইলের গল্প
  • অডিওফাইলের গল্প
  • শব্দের গল্প
  • কিভাবে এলাম এই শব্দে?
  • স্পিকার নিয়ে কথাবার্তা
  • পার্সোনাল অডিওফাইল সেটআপ
  • ড্যাক অ্যাম্পের কিছু আলাপ
  • কিছু গানের কথা
  • হেডফোনের আদ্যোপান্ত
  • ভালো হেডফোনের খোঁজে
  • ইকুয়ালাইজেশন কেন?
  • ইকুয়ালাইজেশন না থাকলে কেমন হয়?
  • ইকুয়ালাইজার কিভাবে কাজ করে?
  • হাই-রেজল্যুশন অডিও
  • হেডফোন অ্যাম্পলিফায়ার
  • 'ডিজিটাল টু এনালগ কনভার্টার' (ড্যাক) আসলে কী?
  • সাউন্ড সোর্স, গানের প্রাণ
  • গান এনকোড করার কাহিনী
  • এমপি-থ্রী ফাইল ফরম্যাট
  • গানের আসল সোর্স
Powered by GitBook
On this page

Was this helpful?

ইকুয়ালাইজেশন না থাকলে কেমন হয়?

ওমা, কি বললেন আপনি?

কি বললাম আবার?

ওই যে সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার গান শোনেন মনিটরে। মনিটর মানে যেটা তৈরী করে আসলের কাছাকাছি শব্দ, যতটা আসা যায় আসলের কাছাকাছি। মানে, ইকুয়ালাইজেশন থেকে সহস্র যোজন দুরে। তাহলে ইকুয়ালাইজেশনের প্রশ্ন আসছে কোথা থেকে? সৌর্স অবিকৃত রাখতেই তো দিলেন এতো গল্প।

আসলেই তাই। ইকুয়ালাইজেশনের প্রশ্ন এলো দুটো জিনিসে। আপনার আমার অডিও সিস্টেমের দুর্বলতা ঢাকতে। আবার, আমরা যখন গান শুনি তখন কয়জনই বা পাই পারফেক্ট এনভায়রনমেন্ট। আপনি পান? হাজারো নয়েজ আশেপাশে। রুম এতো ছোট, বিট শোনা যায় ফাঁটা বাসের মতো। আবার অনেকের রুম এতো বড়, ইকো হয় সারাদিন। রুমে বেশি হিউমিডিটি, ড্যাম্পেনিং ইফেক্ট বেশি, করবেন কি আপনি?

গান শোনার পারফেক্ট পরিবেশ না পেলে ওই পরিবেশকে নতুন করে সিমুলেট করার প্রযুক্তিগত সক্ষমতা তৈরী করেছে মানুষ। ইকো হচ্ছে বেশি, কমিয়ে দাও দুটো তিনটে প্যারামিটার। বুমিং শব্দ বেশি, কমিয়ে দাও ওই ৩২ আর ৬৪ হার্টজের ফ্রিকোয়েন্সির নব। সাধারণ মানের জিনিসে ভালো মানের স্পিকারের সিমুলেশন সম্ভব কিছুটা - এগুলো দিয়ে। তবে সেটা কখনো আসল নয়। সাউন্ড সিগনেচার ‘মিমিক’ করা যায় তবে সেটার আউটকাম ভয়াবহ। জিনিসটা নষ্ট করে দেয় আমাদের গান শোনার অভিজ্ঞতা। যেটা হয়েছিলো আমার।

পুরো পৃথিবীর নতুন প্রজন্ম এ রোগে আক্রান্ত। এদেরকে বলা হয় ‘বাসহেড’। সবকিছুতেই ‘বাস’ লাগবে তাদের। বেশকিছু অডিও কোম্পানিগুলোও সুযোগ নিয়েছে এই ‘বাসে’র জোয়ারে। ‘এক্সট্রা-বাস’, ‘বিগ-বাস’, ‘মেগা-বাস’ স্টিকার লাগিয়ে তুলে নিয়েছে বিলিয়ন ডলার। ‘বাস’ তৈরিতে যা খরচ তার শতগুন খরচ করতে হয় একটা ব্যালান্সড অডিও সিস্টেমে। সবচেয়ে খরচ লাগে একটা পারফেক্ট ‘মিড’কে ঠিকমতো রিপ্রেজেন্ট করতে। বিশাল গানের ‘ডিটক্সিকেশন’ করতে সময় লাগে অনেক। আপনার আমার মনকে ট্রেইন করতে হয় নতুন করে।

অফলাইনে অনেকেই বলেন আমাকে - এই ‘ইকুয়ালাইজেশন’ নিয়ে। বিশেষ করে একটা ভালো ‘ইকুয়ালাইজেশন’ সেটিং নিয়ে গল্প করতে। এটা নিয়ে আমার তিরিশ বছরের উপলব্দি ভিন্ন। অনেক অনেক ওয়াইল্ড রাইডের পর মন এখন কিছুটা থিতু। বয়সের সাথে পার্সপেক্টিভও যায় পাল্টে। বোঝার সুবিধার কারণে সরাসরি না বলে একটু ঘুরিয়ে আসি আলাপে।

ধরুন, ছবি তুলি আমি। ছবি তোলার পর কিছুটা পোস্ট প্রসেসিং করে সবাই। প্রফেশনাল লেভেলে। এখানে কিছু ফিল্টার, আলো আধারির খেলা অ্যাপ্লাই করলাম আমার মতো করে। আমি চাই, আমার কালার, আলো আধারির সেটিংয়ের ইফেক্ট প্রভাব পড়ুক আপনার মনে। ছবিগুলো আপলোড করলাম ফ্লিকারে। অথবা ফেইসবুকে। আপনার মনিটরের আলো আধারি, কালার সেটিং আমার ছবির পোস্ট প্রোডাকশন মনিটরের মতো না হলে ওই ইফেক্টগুলো আবেদন হারাবে আপনার কাছে। মানে, আপনার পিসি’র মনিটরকে স্ট্যান্ডার্ড সেটিংসয়ের বাইরে রাখলে ক্ষতি আপনার।

একজন রেকর্ডিং ইঞ্জিনিয়ার গানগুলোকে এমন ভাবে রেকর্ডিং করেন যাতে আপনার সিস্টেম ‘অপটিমালি’ প্লে করতে পারে ওই সোর্স থেকে। ওখানে যতো ধরনের অডিও ইফেক্ট ব্যবহার করা যায় তার সবগুলো ব্যবহার করেই ছাড়া হয়েছে বাজারে। রেকর্ডিং ইঞ্জিনিয়ার ধারণা করে নেন আপনার অডিও সিস্টেমে নেই কোন আলাদা ‘পোস্ট প্রসেসিং’। আর সেটাই স্বাভাবিক। আমার ‘ইকুয়ালাইজেশন’ সেটিং ‘ইউ’ শেপড, আপনারটা ‘ভি’, আরেকজনেরটা উল্টো ‘ইউ’ হলে বিপদে পড়েন ওই মিক্সিং ইঞ্জিনিয়ার।

সময়ের সাথে সাথে কার্যকারিতা বেড়েছে স্পিকার সিস্টেমে। দক্ষতা বেড়েছে অ্যাম্পলিফায়ারের। সিস্টেমের দুর্বলতা ঢাকার জন্য ‘ইকুয়ালাইজেশন’এর দরকারও আসছে কমে। এখনকার কনসেপ্ট হচ্ছে ‘লেস ইজ মোর’। যতো কম ততো ভালো। সবচেয়ে ভালো ‘অবিকৃত সোর্স’। সোজা সাপটা ভাষায়, কোন পোস্ট প্রসেসিং নেই। একেবারে ফ্ল্যাট। নো ‘ইকুয়ালাইজেশন’। এতেই বরং বোঝা যায় আর্টিস্ট চেয়েছিলেন এভাবেই শোনাতে। আমাকে আপনাকে। আজকের সব ভালো অ্যাম্পলিফায়ারে নেই কোন ‘ইকুয়ালাইজার’। ভালো ‘ডিজিটাল টু এনালগ কনভার্টারে’ নেই কোন বাড়তি প্রসেসিং। সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ছে ‘মনিটর’ হেডফোন আর স্পিকারে। গায়ক বা গায়িকা যেভাবে চেয়েছেন আমাদের শোনাতে।

তাহলে দরকার কি ইকুয়ালাইজারের? ভালো প্রশ্ন। দরকার আছে। গান শোনানোর ইন্ডাস্ট্রিটা অনেক অনেক বড়। না হলে অ্যাপল আর গুগল পাগলের মতো লেগেছে কেন আমাজনের পেছনে? সিডি বিক্রি করে ভালোই করছিলো আমাজন, ডিজিটাল ডাউনলোড নিয়ে উত্তাল হয়ে গেল দুনিয়া। আর কেই বা ছাড়ে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের হাতছানি। তৈরী হলো কতো স্টার্টআপ। এর ভেতরেই। গান শোনাটা নির্ভর করে প্রতিটা মানুষের নিজস্ব প্রেফারেন্সের সাউন্ড সিগনেচারে। আর সেটার ‘ম্যানিপুলেশনে’র সুযোগ নেয় অনেকেই।

যেমনটা নিয়েছে ‘বিটস’ হেডফোন অথবা বোসের কিছু প্রোডাক্ট লাইন। তরুণ প্রজন্মকে বড় ‘বাস’য়ের লোভ দেখিয়ে অনেকটাই নষ্ট করেছে আসল গান শোনার মজাটা। সত্যি বলতে - ‘ইটস অল এবাউট এক্সপেরিয়েন্স’। অনেকে বলবেন, ওদের কি দোষ, প্রোডাক্ট আসবে বাজারের চাহিদার ওপর। চাহিদা আছে বলেই তৈরী হচ্ছে জিনিস। একদম ঠিক কথা। তাই বলে আর্টিস্ট যেভাবে চেয়েছিলেন তার শব্দকে আমূল ‘বিকৃত’ করে? শব্দের সিগনেচার পাল্টাই আমরাও - তবে সেটা সীমার ভেতরে থেকে।

বিটসের ‘ওভারপাওয়ারিং’ ‘বাস’ তার সীমানা পার হয়ে খেয়ে ফেলে মিডের বড় অংশ। ইনস্ট্রুমেন্ট আর গলার কারুকাজ দেখানোর এই ‘মিড’ ‘বাস’য়ের বাড়তি চাপে হারিয়ে যায় অনেকাংশে। আর সেখানেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় এই ইকুয়ালাইজার। মনে হচ্ছে বেশি ‘বুমি’, টেনে নামিয়ে দিন ‘সাব-বাস’ (২০-৬০ হার্টজ) আর ‘বাস’ (৬০-২০০ হার্টজ) রেঞ্জ। লাগছে বেশি কানে, কমিয়ে আনুন ব্রিলিয়ান্স/স্পার্কল রেজিস্টার নব। শব্দ জায়গা পেতে শুরু করে ১২-১৬কিলো হার্টজে। শব্দকে ‘স্পেসাস’ আর খোলা খোলা লাগে এই রিজিয়নে। আবার এর মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার ট্রেবলকে বাড়িয়ে শেষমেষ বাড়াবে মাথাব্যথা। আর তাই দরকার ইকুয়ালাইজারের ‘যতটুকু লাগে ততোটুকু’ ব্যবহার।

সত্যি বলতে, ইকুয়ালাইজার আপনার হাতে তুলে দিয়েছে অসীম ক্ষমতা। শব্দকে শিল্পের পর্যায় নিয়ে যায় এর যথাযথ ব্যবহার। মনে আছে, স্পাইডারম্যানের চাচার কথা? মারা যাবার ঠিক আগে বলে গিয়েছিলেন একটা অমোঘ সত্য। ‘উইথ গ্রেট পাওয়ার, কামস গ্রেট রেসপনসিবিলিটি’। আপনি যদি আসলেই জানেন কি করছেন আপনি, তাহলে এটা একটা বড় টুল। ব্যবহার করতে হবে ‘দ্বায়িত্ব’ নিয়ে।

Previousইকুয়ালাইজেশন কেন?Nextইকুয়ালাইজার কিভাবে কাজ করে?

Last updated 5 years ago

Was this helpful?