'ডিজিটাল টু এনালগ কনভার্টার' (ড্যাক) আসলে কী?

আমাদের মোবাইল আর কম্পিউটারের যেই হেডফোন জ্যাক আছে সেটা আমাদের জন্য নয়। মানে অডিওফাইলদের জন্য তৈরি করা হয়নি ওই জ্যাকগুলো। আর সেকারণেই মোবাইল আর পিসির ‘স্টক’ মানে ‘সঙ্গে দেয়া হেডফোন জ্যাক’ দিয়ে অডিও নেবো না আমরা। বরং ওই গানগুলোর ডিজিটাল সিগন্যালকে কান ধরে বের করে নিয়ে আসবো বাইরে। মাইক্রো-ইউএসবি পোর্ট দিয়ে। আর সেকারণে মোবাইলের ডাটা ক্যাবল দিয়ে ডাটা ট্রান্সফার করে পাঠিয়ে দেবে হেডফোনের ‘ড্যাক’য়ে। ড্যাক হচ্ছে আমাদের হেডফোনের ‘ডিজিটাল টু এনালগ কনভার্টার’।

এই ড্যাক কাজ করে আমাদের সময়ের ওই ডেডিকেটেড সাউন্ড কার্ডের মতো। মোবাইল থেকে ডাটা ট্রান্সফারের মতো ডিজিটালি ০ আর ১ চলে আসে এই ড্যাকে। ফাইলের ফরম্যাটের ভিত্তিতে সেটাকে ডিকোডিং করে এই জিনিস। উদাহরণ দেই একটা? সাধারণ সিডি কোয়ালিটির একটা গান রিপ করলে সেটার স্যাম্পলিং ফ্রিকোয়েন্সি থাকে ৪৪.১ কিলোহার্টজে।

হ্যাঁ, মানুষের শোনার মাত্রার কিছু ওপরে। এটা দ্বিগুন হচ্ছে ওই ‘নাইকোয়েস্ট থিওরি’র কারণে। আবার সেটা ১৬ বিট হবার কারণে প্রতি সেকেন্ডে ‘স্টোর’ হচ্ছে ৬৫,৫৩৪ ডাটা পয়েন্টে। ফলে ফাইল সাইজ যাচ্ছে বেড়ে। ওই একই গানের সাধারণ ‘এমপিথ্রি’ পাঁচ মেগাবাইট হলেও লসলেস ফরম্যাটে এসে দাড়ায় প্রায় চল্লিশ মেগাবাইটে।

আবার শব্দের হাই রেজোল্যুশন ‘ফোরকে’র মতো ষ্টুডিও কোয়ালিটির ওই গান শুনতে হলে ২৪ বিটে ‘স্টোর’ করতে হবে ৪,২৯৪,৯৬৭,২৯৪ ডাটা পয়েন্টে। মানে ওই পাঁচ মেগাবাইটের গান এসে দাড়াবে প্রায় দুশো মেগাবাইটে। সাইজেই যতো আর্টিফ্যাক্ট। মধু ওখানেই। অবসন্ন যায় সব কেটে। আমি লিখছি আর শুনছি ওরকম একটা ‘হাই-রেজোল্যুশন’ গান।

বলেই ফেলি। লেখার সময় হেডফোনে থাকে মুভিগুলোর ‘সাউন্ডট্র্যাক’। এখন চলছে টমাস নিউটনের ‘দ্য ফার্ম’ স্কোরটা। হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন। ‘রোড টু প্রেডিশন’ মুভিটা থেকে। সবাই বলে অসাধারণ একটা মুভি। মুভিটা ভালো না খারাপ, সেটা জানি না। তবে, তার থেকেও খারাপ কাজ করেছিলাম একটা। কেঁদেছিলাম অনেকক্ষণ। ষ্টুডিও কোয়ালিটির এই সাউন্ডট্রাকটা চলছে আমার ইন্টেল প্রসেসর ভিত্তিক আসুস জেনফোনে। এটার ‘অনবোর্ড সাউন্ড প্রসেসর’ অতি সাধারণ মানের। বাজার ধরতে দাম কমাতে গিয়ে এই অবস্থা।

এদিকে অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম মার্শমেলো’র স্যাম্পলিং রেট হচ্ছে ৪৮ কিলোহার্টজের। সমস্যা নেই। মোবাইলের ভেতর মাইক্রোএসডি কার্ডে রাখা সাউন্ডট্র্যাকগুলো আবার ২৪ বিটের। ফলে এগুলোর স্যাম্পলিং রেট ৯৬ কিলোহার্টজের। কি আর করা? ডাটা ক্যাবল দিয়ে বাই-পাস করতে হলো অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমকে। সেটাকে ডিকোড করলো ড্যাকের ভেতরের ‘ডেডিকেটেড’ টেক্সাস ইনস্ট্রুমেন্টসের পিসিএম ৫১০২ প্রসেসর।

তারপর, ইন্টারনাল নয়েজ ফিল্টার করে সেটার আউটপুটকে চমত্কার করে ‘অ্যামপ্লিফাই’ করলো ম্যাক্স ৯৭২২০ অ্যাম্প আইসি। লিখছি আর এদিকে গলে পড়ছে কান। মাখনের মতো। ‘কান বাবা’ এতো মোলায়েম শব্দ শোনেনি অনেকদিন। যতো ঝামেলা মনে হচ্ছে সেরকম কোনো ঝামেলা নেই এতে। কথা দিচ্ছি একটা ইউটিউব ভিডিও করবো শিগগিরই। তার আগ পর্যন্ত আমার বাসায় দাওয়াত। আপনার কান গলাতে আমার প্রিয় দুটো সাউন্ডট্র্যাকই যথেস্ট।

Last updated