গানের আসল সোর্স

ফার্স্ট ফরওয়ার্ড। এখন আমরা কিনছি ২৪ বিটের ডিজিটাল প্লেয়ার। সঙ্গে আসছে ‘ডিস্টরশন ফ্রি’ ড্যাক। সেরা প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো তৈরি করছে সেগুলোর ভয়ানক ‘অ্যাম্প’। আর হেডফোন? সেটা আর বলতে। কানের লতি থেকে ওই কানের ভেতরের বাতাসকে কিভাবে কাঁপাবে সেটা নিয়ে মিলিয়ন ডলারের রিসার্চ হয় জাপানে। পাগলামি? বোধহয় না।

আমার কথা অন্যখানে। আপগ্রেড করেছি সব। সোর্স ছাড়া। ওয়াকম্যান থেকে ডিজিটাল প্লেয়ার। বাতাসের পরিশোধনের মতো শব্দের হাই রেজোল্যুশন ‘ড্যাক’। স্পেশালাইজড অ্যাম্প। শুধুমাত্র হেডফোনের জন্য। তবে পাল্টায়নি একটা জিনিস। দশ বছর আগের ওই এমপি-থ্রি এখনো আমাদের কাছে। তাহলে হবে কিভাবে? এর মানে, তৈরি করলাম রকেট, যাবো চাঁদে। ফুয়েল হিসেবে নিচ্ছি ওই আদ্দিকালের কেরোসিন। ঠিক বলেছেন। ভুল উদাহরন। কেরোসিন দিলে তো চালুই হবে না রকেট। কি যে ভুলভাল বলছি ইদানিং।

গান নিয়ে কথা উঠলে সবাই বলেন ইদানিং ‘ইটস অল এবাউট সোর্স’। আবার, ‘হাই-রেজোল্যুশন’ মানে এই নয় যে গানটা ‘ফ্ল্যাক’ অথবা ‘ওয়েভ’ ফরম্যাটে হলেই হয়ে গেল ‘হাই-রেজ’। ধরুন, ফাইলটা ছিলো আসলে এমপি-থ্রি ফরম্যাটে। এটাকে আপস্কেল করা হলো ‘হাই-রেজে’, সেটাতো ফিরিয়ে দেবে না হারানো ওই ডাইনামিক রেঞ্জ। ব্যাপারটা এরকম - রাঁধবেন পোলাও, তো হাতের কাছে আছে সাধারণ চাল। যতোই চেষ্টা করি - খেতে পারবো কি পোলাও?

এখন আসি কিছু হিসেবে। কিছু ‘ভিউপয়েন্ট’ নিয়ে আসি যারা তৈরি করেন ‘হাই-রেজোল্যুশন’ গানের যন্ত্রপাতি। সনি’র কথাই ধরি। তাদের ওয়েবসাইটে একটা তুলনা দেয়া আছে এ ব্যাপারে। ‘হাই-রেজ’ মানে সিডি আর এমপিথ্রি থেকে হতে হবে বেশি স্যাম্পলিং। সেটা ‘প্লেব্যাক’ অথবা ‘এনকোডিং’ যেটাই হোক না কেন। আগেই বলেছি বেশি স্যাম্পলিং রেট মানে বেশি বেশি ‘স্যাম্পল’ নেয়া হয়েছে প্রতি সেকেন্ডে। আসল এনালগ থেকে ডিজিটাল করার সময়।

সিডি’র স্যাম্পলিং রেট জানেন সবাই। ৪৪.১ কিলোহার্টজ। আর ‘বিট ডেপথ’ বললে এটা ১৬ বিটের। নাইকোয়েস্ট মামা’র হিসেবে ২০ কিলোহার্টজের দ্বিগুন। সে হিসেবে ‘হাই-রেজ’ ধরা হয় ৯৬ কিলোহার্টজের ওপরের দিকের রেটগুলোকে। মানে, মামার হিসেবের প্রায় কয়েকগুন বেশি।

প্রশ্ন করেছিলেন অনেকেই, কেন বেশি রেট মানেই ভালো জিনিস। মনে আছে পুরানো দিনের ফিল্মের সিনেমার কথা? সিনেমার ওই ফিল্ম আর কিছুই নয়, হাজারো আলাদা ছবি মিলে ওই সিনেমার ফিল্ম। একেকটা ছবি থেকে আরেকটা ছবির মধ্যে একটা কালো দাগের বর্ডার। ছবির শুরুতে বা ফিল্ম ছিড়ে গেলে মাঝে মধ্যে দেখা যেতো ওই দাগ। মানুষের চোখকে ফাঁকি দিয়ে বের করা হলো ফ্রেমরেট। মানে, ২৫টা ছবিকে এক সেকেন্ডে পার করলে চোখ টের পেতো না ওই দাগ। চোখের ওপর চাপ কমানোর জন্য সেটা বাড়ানো হলো ৩০য়ে। এলসিডি মনিটরে সেটা এসে দাড়ালো সেকেন্ডে ৬০য়ে। ৬০ বার পাল্টাবে ছবি। সেকেন্ডে। যতো বেশি ফ্রেমরেট ততোই কাগজের মতো স্থির মনে হয় মনিটরকে। ১০০ হার্টজের টিভি আরো সহনীয়। ওই নিয়মের বাইরে নয় শব্দ।

ধরুন, ইউটিউব দেখছেন আপনি। যে ‘আইএসপি’ দিয়ে আপনি কানেক্টেড, তার স্পিড কম হলে আপনার ভিডিওটা চলে আসবে ৩২০ পিক্সেল রেটে। আবার স্পিড ভালো হলে সেটা দেখবেন ৭২০ পিক্সেলে। ৭২০পি মানে এক লাইনে ৭২০টা ডট পাল্টাবে প্রতি ফ্রেমে। প্রতি সেকেন্ডে। আরো ভালো হলে ৪কে রেজোল্যুশনে। মানে, আপনার চোখ ধাধাঁনো হাই-ডেফিনেশন ছবি নির্ভর করছে পেছনের ডাটার ট্রান্সফার রেটের ওপর। যতো মোটা পাইপ ততো ভালো ছবি। গানেও একই জিনিস।

ধরুন আরেকটা জিনিস নতুন করে। শুনছেন এমপিথ্রি। সাধারণ এমপিথ্রি হয় ১২৮ কিলোবিট/সেকেন্ডের। মানে ওই গানটা শোনার সময় স্টোরেজ থেকে প্লেয়ারে আসার গতি লাগবে ১২৮ কিলোবিট। প্রতি সেকেন্ডে। সেখানে অডিও সিডি’র লাগে ১৪১১ কিলোবিট। প্রতি সেকেন্ডে। ওদিকে সবচেয়ে কম রেজোল্যুশনের ‘হাই-রেজোল্যুশন’ অডিওতে বিট রেট লাগে ৯২১৬ কিলোবিট, প্রতি সেকেন্ডে। মানে, সাধারণ এমপিথ্রি থেকে সিডিতে গতি লাগে ১১ গুণ। আর হাই-রেজোল্যুশন অডিওতে লাগে ৭২ গুন বেশি!

আপনার কথা, বাহাত্তুর গুণ! সে তো অনেক! সে তুলনায় অডিও কোয়ালিটি পাব কেমন? চমত্কার প্রশ্ন। সেটার উত্তরে ফিরে যাবো আরেকটা গল্পে। ফ্রেঞ্চ রান্নার কদর জানেন সবাই। একটা জিনিস মানে তারা। রান্নার সময় চেষ্টা করে জিনিসটার আসল স্বাদ রাখতে। সেকারণে ফ্রেঞ্চ খাবারে নেই কোন মশলা।

Last updated