হেডফোনের আদ্যোপান্ত

আগে বলুন তো, হেডফোন পছন্দ করেন না কে কে? মাফ করবেন। প্রশ্নটাই ঠিক হয়নি বরং। হেডফোন পছন্দ করেন কে কে বললে উত্তর হতো ‘সবাই’। আসলেই তাই। জিনিসটা একেবারে পার্সোনাল। নিজের মতো করে চা বানিয়ে খাওয়ার মতো।

ঘরে বাজাচ্ছেন গান। বড় সিস্টেমে। সবাই যে ওই প্লেলিস্ট পছন্দ করছেন সেটা আশা করাটাই অন্যায়। সে তুলনায় হেডফোন কতো কতো ‘পার্সনালাইজড’। যারা হেডফোনে ফুল ভলিউমে গান শোনেন তাদের কথা আলাদা। তারা চান, সব্বাই জানুক তাদের প্লেলিস্ট! কানের বারোটা বাজিয়ে। তাও আবার নিজের কান!

ধরুন, দাড়িয়ে আছেন আয়নার সামনে। পুরো ‘ফ্ল্যাট’ হলে ঠিক দেখতে পারার কথা। আয়নায়। নিজেকে। আপনার। আয়নাটার পেছনে বাঁকা ত্যাড়া হলেই বিপদ। চোখের চেয়ে বড় দেখাবে মুখ। কানের থেকে নাক। সোজা কথা। মিলবে না ‘আসপেক্ট রেশিও’। সৃষ্টিকর্তা যে আনুপাতিক হারে বানিয়েছেন আমাদের অঙ্গগুলোকে, মিলবে না সেটা। জিনিসটার নাম আছে একটা। কিম্ভুতকিমাকার। মেলাতে দেখেছি ওই আয়না। ছোটবেলায়। জাদুর আয়না।

শব্দেও হয় ওই অবস্থা। রেকর্ডিং ষ্টুডিও আর গায়ক কিভাবে শোনাতে চেয়েছেন তার গান? সেটা জানতে চেয়েছি কখনো? রেখেছি কি সেই আনুপাতিক জিনিসটা? হেডফোন বাছতে গেলে জানতে হবে সেই গল্প। তাহলেই কেনা যাবে পছন্দমতো জিনিস। সবার কান ভিন্ন। তবুও জিগ্গেস করেন সবাই। ভাই কেমন জিনিসটা? উত্তর যাই হোক, ব্যাপারটা ‘অন্যের মুখে ঝাল খাওয়ার মতো জিনিস’। অথচঃ খুবই সহজ ব্যাপারটা। ইঞ্জিনিয়ারিং না জানলেও চলবে। আজকের গল্পের নাম ‘ফ্রিকোয়েন্সি রেসপন্স কার্ভ’। দেখতে পারেন গুগল করে। ওই হেডফোনের নাম দিয়ে।

কি হয় আয়নায়? আলো এসে পড়ে আমাদের শরীরে। মুখে, হাতে, জামা কাপড়ে। শরীর রঙের বাকি জিনিস হজম করে পাঠায় আসলটাকে। সেটাই রিফ্লেক্ট হয় আয়নায়। মানে, আয়নাকে হতে হয় একেবারে ‘ফ্ল্যাট’। রঙ বর্ণ নির্বিশেষে। আলো পাঠাবে যা, প্রতিফলন করবে পুরোটাই।

মানুষ শুনতে পায় ফ্রিকোয়েন্সির বড় একটা রেঞ্জ। আপনার হেডফোনকেও পারতে হবে ওই জিনিস। ফুটিয়ে তুলতে। আয়নার মতো ‘রিপ্রোডিউস’ করতে। ‘ট্রান্সপ্যারেন্টলি’। প্রতিটা জিনিস। গানের সাউন্ড সিগনেচার নির্বিশেষে। ধরুন, পছন্দ করেন ‘বাস’, অথবা ‘ট্রেবল’। আর সেটা বুঝেই খালাস, হবে কি তখন? বিক্রেতাও গছিয়ে দেবে ওই বাঁকা ত্যাড়া জাদুর আয়না। হয়ও তাই। প্রথমে কাজ করে ফ্যাশন আইটেম হিসেবে। পরে ওই হেডফোনে জমতে থাকে ধুলার আস্তর। চলে যায় খাটের নিচে।

বলেও তো বিপদ! যদি বলেন, ‘ঠিক আছে খাটের নিচেরটাই দেন। তাও সই।’ আমার পয়েন্ট অন্য। অনেক ‘ভেজাল’ শুনেছেন, আর নয়। সত্যি বলছি! ‘ভেজাল’ শুনতে শুনতে ভুলে গেছি আসল ‘সাউন্ড সিগনেচার’। যেভাবে চেয়েছেন গায়ক। শুনতে আমাদের। ব্যাপারটা একটা বড় বিপর্যয়। শেষে, শুনতে ভালো লাগে না আর গান! হারিয়ে যায় তার আবেদন। মানি, ‘বাস’ ব্যাপারটা কিছুটা ‘সেক্সি’। তবে সেটা ‘লেস ইজ মোর!’ আসল ব্যালান্সটা জানা জরুরি। পোলাও কোর্মা কার না লাগে ভালো? তাই বলে প্রতিদিন? তেমনি, বাটন থাকলে ভালো, প্রতিটা কাজে। এই আমাদের ফোনে। তাই বলে কয়টা বাটন দরকার আইফোনে? বরং প্রশ্নটা হবে এমন, কয়টা বাটন না হলেই নয়? লেস ইজ মোর। ‘বাস’ ভালো, তবে কতোটা ভালো সেটা জানেন ওই গায়ক আর সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার। ইকুয়ালাইজেশনের ঠিক ‘মিক্স’ করেই ছেড়েছেন সিডি। বাজারে। কানে লাগালেই পড়বে মধু। ত্যানা প্যাঁচাতে বলেছে কে হেডফোনকে? যা আছে সিডিতে, সেটার ঠিক ইমেজিং তৈরি করবে হেডফোন। পিরিয়ড। তাহলে, ‘মেগাবাস’ ‘এক্সট্রা বাস’ কেন বাজারে? অসাধারণ প্রশ্ন! যৌক্তিক বটে।

ধরে নেই আমাদের পছন্দের হেডফোনটা আয়নার মতো একটা জিনিস। ষ্টুডিওতে যা রেকর্ডিং হয় সেটার ট্রু-কপি রিফ্লেক্ট করতে পারতে হবে আমাদের এই হেডফোনকে। এদিকে মানুষ কি শুনতে চায় সেটা নিয়ে আলাপ করবো আরেক চ্যাপ্টারে।

পার্সোনাল অডিও সিস্টেমের চাহিদা বেড়েছে ইদানিং। “ইদানিং” বলাটা ঠিক হচ্ছে না কারণ, আমাদের সময়েও বেশ জনপ্রিয় ছিলো ‘ওয়াকম্যান’ জিনিসটা। তবে, সময় গড়িয়েছে অনেক। বিশাল উন্নতি এসেছে প্রসেসিং ক্ষমতায়। এখনকার একটা মোবাইল ফোনে চলে এসেছে ডেস্কটপের বেশি প্রসেসিং ক্ষমতা। মুর’স নীতিকেও পেছনে ফেলে এই ‘মিনিয়েচার’ যুগ।

Last updated