হাই-রেজল্যুশন অডিও

গত কয়েক বছরে অডিও ইন্ডাস্ট্রিকে ওলট পালট করেছে বেশ কিছু জিনিস। স্ট্রিমিং সার্ভিসটা চলে এসেছে একেবারে মেইনস্ট্রিমে। প্রচুর মানুষ এখন ব্যবহার করছে স্পটিফাই, টাইডাল, প্যান্ডোরার মতো সার্ভিস। রিজিওনাল রেস্ট্রিকশন না থাকাতে ‘ওয়ান ডট এফএম’য়ের সার্ভিস পৌঁছে গেছে বাংলাদেশের আনাচে কানাচে। এমন অবস্থা, আমার দিনের কিছু সময় ওটা না শুনলে মনে হয় কি যেন করিনি আজ।

এদিকে - হঠাৎ করেই মানুষ ফিরে যাচ্ছে ‘ভাইনলে’। আমাদের ভাষায়, পুরানো রেকর্ডে। এ নিয়ে যুদ্ধ হয়নি কম। এখনকার ডিজিটাল মিডিয়াম নাকি ঠিক মতো ধরতে পারছে না এনালগ সাউন্ড সিগনেচার! আর তাই ‘ভাইনলে’ ফেরৎ। এটা নিয়ে বিতর্কে যাবো না আমি। সাউন্ড সিগনেচার নির্ভর করে মানুষের ওপর, বলতে গেলে পুরোটাই সাবজেক্টিভ। ধরুন, শুনে এসেছি আশির দশকের গান, ওই ভাইনল থেকে রেকর্ড করা। এখন ওই ভাইনলের প্রতি দুর্বলতা তো থাকবে কিছুটা। প্রযুক্তিগতভাবে কোনটা ভালো সেটা জানে সবাই। তবে সব বিতর্ককে পেছনে ফেলে এগিয়ে গিয়েছে ‘হাই-রেজোল্যুশন’ নামে আরেক বিতর্ক।

গত তিন বছরে আমি নিজেই কিনেছি অনেকগুলো ‘হাই-রেজোল্যুশন’ অ্যালবাম। মানে, এই ‘হাই-রেজোল্যুশন’ স্রোতে গা ভাসিয়েছি আমিও। যখন তৈরী হয়েছিলো অডিও সিডি, তখনই তো ওটার ‘রেডবুক’ বলেছিলো মানুষের শ্রবণশক্তির কিছুটা ওপরে গিয়েই তৈরি করা হয়েছে এই সিডি। তাহলে এখন সমস্যা কিসের?

হেডফোন কিনতে গিয়েও সেই বিপত্তি। আমার মাথা আটকে আছে ওই ‘হাই-রেজোল্যুশন’ জিনিসটা নিয়ে। একটা মজার টপিক নিয়ে আলাপ করি বরং। জিনিসটা ফতুর করে দিচ্ছে আমাকে। ঠিক ধরেছেন। ‘হাই রেজোল্যুশন’ অডিও। পুরো পৃথিবী এই জ্বরে আক্রান্ত। আমিও। না হয়ে উপায় কি? প্রযুক্তি সুবিধা দিলে কেন নেবো না ওই জিনিস। আপগ্রেড করলাম বাসার প্লেয়ার। সেটার সাথে মিলিয়ে চলে এলো আপগ্রেডেড অ্যাম্প। ওই অ্যাম্পের সুতো ধরে আরেকটাও চলে এলো হাতের মুঠোয়। এটা হেডফোন অ্যাম্প। সঙ্গে ডিজিটাল টু এনালগ কনভার্টার (ড্যাক)। এলো স্পিকার।

পার্সোনাল অডিও সেকশনে চলে এলো বাদুড়কে শোনানোর হেডফোন। ৩৫ কিলোহার্টজের হেডফোন। নিচের একটা রেঞ্জ শুনি আমি। বাকিটা শোনে বাদুড়। বাসার আমগাছে ওরা ঘুরতে আসে মাঝে সাজে। এদিকে হাতের মুঠোর ‘ড্যাক’ চলে গেছে অনেক দুরে। প্রযুক্তি সাথে হাত মিলিয়ে। এখনকার সাধারণ ‘ড্যাক’গুলোই সাপোর্ট করে ২৪ বিটের গান। স্যাম্পলিং চলে গেছে ১৯২ কিলোহার্টজে। মানে, ষ্টুডিও কোয়ালিটি যন্ত্র চলে এসেছে হাতের মুঠোয়। অতদূরে যাবো না আমি। ১৯২ই ওভারকিল, ৯৬ কিলোহার্টজ সই। পার্সোনাল অডিও সেকশনের কথা বলি। প্রথমে আসে প্লেয়ার।

ডেডিকেটেড ডিজিটাল প্লেয়ার ছাড়াও এখনকার মোবাইলফোনগুলো সকল কাজে কাজি। মানে গান শোনার যন্ত্রের গণতন্ত্রায়ন এনেছে এই মোবাইল ফোন। মিউজিক থেকে কথা বলা - সবকিছুর জন্য ফোনের ভেতরেই আছে ইন্টারনাল ‘ড্যাক’। আগেই বলেছি এগুলোর মান ভালো নয় অতোটা। সেটাকে বাইপাস করতে বাজারে চলে এসেছে এক্সটার্নাল ‘ড্যাক’ আর হেডফোন ‘অ্যাম্প’। দুটোর ‘কমবো’ও পাওয়া যায় ইদানিং। তুখোড় পারফরমেন্স একেকটার। যেটাই শুনি সেটাই মনে হয় কিনি। আমাজনের বেস্টসেলার লিস্ট দেখলে বিশ্বাস হবে সবার।

মালয়েশিয়া গিয়েছিলাম এবার। ওখানে হেডফোনের ওপর ‘স্পেশালাইজড’ স্টোর আছে অনেকগুলো। কেনার বাধ্যবাধকতা নেই। শোনা যায় নিজের মতো করে। এই ‘ড্যাক’ নিয়ে হাজারটা অপশন দেখে নিজেই বেকুব আমি। দোকানের সেলসে যারা আছেন তারা একেকজন ভয়ংকর ধরনের ‘অডিওফাইল’। ওদেরকেই নেয়া হয়েছে যারা জানে ব্যাপারটা ভালো। ভালো মানে অনেক অনেক ভালো। বরং, সেলস টার্গেট নেই তাদের ওপর। দশ পনেরো বছরের অভিজ্ঞতা এই জিনিস নিয়ে। তাদের ‘মটো’ একটাই। ছড়িয়ে দাও জ্ঞান। তৈরী করো বাজার। ক্রেতারাই ফিরে আসবে নিজ থেকে। নেবে ‘ইনফর্মড’ ডিসিশন। সুদূরপ্রসারী চিন্তাভাবনা। ওদের কয়েকজনের ফেইসবুক পেজে গিয়ে আরেক দফা বেকুব হতে হলো আমায়। শয়নে স্বপনে পার্সোনাল অডিও। ধারণা করছি, হেডফোন চাঁপিয়ে ঘুমাতেও যায় ওরা।

মানি না মানি, প্রযুক্তির কারণে গান শোনার যন্ত্র চলে এসেছে মোবাইল ফোনে। তবে এটা ঠিক, বহনযোগ্য ওই প্লেয়ারের দুর্বলতা ঢাকতে এসেছে ভালো মানের ‘ড্যাক’। ওই ‘ড্যাকে’র আউটপুটকে ভালো হেডফোনে দেবার আগে ওই অডিওকে ঘুড়িয়ে নিয়ে আসছি হেডফোন ‘অ্যাম্প’ থেকে। দেখা গেছে ভালো মানের হেডফোনগুলোর ‘ইমপিডেন্স’ বেশ বেশি। ওদেরকে ভালো ভাবে ড্রাইভ করতে দরকার এই ‘অ্যাম্প’। যতো বেশি কারেন্ট - হেডফোনের ড্রাইভারকে কন্ট্রোল করা যায় ততো বেশি। এখন পুরো ইকোসিস্টেম তৈরী হয়ে গেলো ষ্টুডিও কোয়ালিটি রেকর্ডিং চালানোর জন্য। বাকি থাকে কি?

Last updated