সাউন্ড সোর্স, গানের প্রাণ

গানের প্রাণ কী?

আসলেই তাই। সাউন্ড সোর্স। সোর্স হিসেবে প্লেয়ারে যে ফাইলটা চালাচ্ছি সেটার ওপর নির্ভর করছে অনেককিছু। টেলিকমিউনিকেশনের হিসেবে এটাকে বলে ‘গার্বেজ ইন গার্বেজ আউট’। সোর্স যদি হয় বাজে, তাহলে লাখ টাকার ডিজিটাল প্লেয়ার, ‘ড্যাক’, ‘অ্যাম্প’ আর হেডফোনের ইনভেস্টমেন্ট পুরোটাই পানিতে। আরেকটা জিনিস হয় এখানে। সোর্সের অসহায়ত্ব ফুটে ওঠে এই চেইনের শেষ মাথায়। বাজে রেকর্ডিং হলে তো কথাই নেই। দক্ষ সিস্টেমের এটার সুবিধা। রেকর্ডিংয়ে ‘ভুল ভাল’ সব শোনা যায় এই মনিটরিং সেটআপে। এখানে হেডফোন হচ্ছে ফাইনাল আউটপুট। তখন মনে হয় কতো কিছুই না মিস করেছি আমাদের ছোটবেলায়। বিশেষ করে ডাইনামিক রেঞ্জে।

তবে এটা মানতে হবে - আশির দশকে এই ‘এমপি-থ্রি’ ফরম্যাট ছিলো ‘গডসেন্ড’। তবে সেই ‘স্ট্যান্ডিং’ থেকে বের হয়ে যাবো আমরা। দাম কমে এসেছে স্টোরেজের। ক্যাপাসিটি বেড়েছে হার্ডডিস্কের। স্পিড বেড়েছে ইন্টারনেটের। এমপিথ্রির অসম্ভব ‘কম্প্রেশন’ প্রযুক্তির বদৌলতে সিডির একটা গানকে নামিয়ে নিয়ে আসে অল্প ফুটপ্রিন্টে। তবে সেটা সম্ভব সাউন্ডের বড় একটা ‘আর্টিফ্যাক্ট’ ফেলে দিয়ে। সাউন্ডের ‘ওয়াও’ ফ্যাক্টর কাজ করে এখানে। আমাদের এইচডি টিভির ‘ফোরকে’ হয় যদি ‘হাই রেজোল্যুশন’ অডিও - তাহলে ‘এমপি-থ্রি’ হবে ভ্যাকুয়ামের ‘সিআরটি’ টিভি। বিশ্বাস না হলে বলবেন - লিসেনিং রুমে ডেমো দিয়ে দেবো’খন। ও আচ্ছা, আমার ব্যাগপ্যাকেই থাকে ‘লিসেনিং রুমে’র সবকিছু।

‘হাই রেজোল্যুশন’ অডিওকে সবাই ডাকে ‘হাই-রেজ’ নামে। আমরাও ডাকবো এই নামে। এটা ঠিক, এমপিথ্রি’র সহজ বহনযোগ্যতা (পোর্টাবিলিটি) আর সিডি’র ক্রিস্টাল ক্লিয়ার শব্দের পর ‘হাই রেজোল্যুশন’ অডিও মানুষকে কি দেবে সেটা নিয়ে আছে তর্ক। আমি তর্কবাগীস নই, তবে আমার অভিজ্ঞতা বলে ‘হাই-রেজ’ যে বিট আর স্যাম্পলিং রেট নিয়ে শুরু সেটাতেই সন্তুষ্ট আমি। ২৪ বিট আর ৯৬ কিলোহার্টজ। এর পরের ধাপগুলো কিছুটা ওভারকিল। ৩২ বিট অডিও এতোটাই পারফেক্ট, এই চিপটার ‘স্পেসিফিকেশন শিট’ পড়লে কাটা দিয়ে ওঠে গায়ে। যারা অডিও জগতে আছেন যুগ ধরে তারা বলতে পারবেন ভালো। এর বৈজ্ঞানিক উপাখ্যান নিয়ে আসবো একটু পরে। তবে ‘হাই-রেজ’ ইজ হিয়ার তো স্টে’। সহসাই যাচ্ছে না কোথাও।

পৃথিবীর সবকিছুই এনালগ। শুরুতে। তবে জ্ঞানকে ধরে রাখতে মানুষ নিয়ে এলো ডিজিটাল প্রযুক্তি। মনে আছে আমাদের আমলের নোটগুলোর কথা? অনেকে বলবেন ‘চোথা’, তাও সই। এক নোট ফটোকপি করতে করতে যেতো এমন অবস্থায়, পড়া যেতো না বেশিরভাগ পাতা। এই কপি করার পদ্ধতিটা এনালগ। এখন, পাল্টে গেছে যুগ। সবাই স্ক্যান করে নেন নোটটাকে। ফার্স্ট হ্যান্ড। দরকার মতো প্রিন্ট করলেই হয়ে গেলো হুবহু কপি। এখন স্ক্যান প্রযুক্তি এতোই তুখোড়, মানুষ ভিমড়ি খায় কোনটা কপি আর কোনটা আসল বুঝতে। মানে, ওই ‘চোথা’ স্ক্যান করে নিলেই হলো একবার, পরের কপিগুলো ফ্যাকাসে হবে না সারাজীবন। যতোদিন ওই কপিটা সংরক্ষণ করা হচ্ছে ‘ডিজিটালি’।

উনিশশো আশি’র কথা। ক্যাসেটের যুগ। তক্কে তক্কে থাকতাম ভালো গানের লোভে। খুঁজতাম প্রিয় ব্যান্ডের ‘অরিজিনাল’ রেকর্ডিংয়ের ক্যাসেট। পেলেই চলে যেতাম এক বন্ধুর বাসায়। ওর বাসায় ছিলো ‘ক্যাসেট টু ক্যাসেট রেকডিং’য়ের প্লেয়ার। রেকর্ডিং শেষে ফেরৎ দিতাম আসল ক্যাসেটটা তার মালিককে। এমন হতো পরে, অনেকেই কপি করতো আমার এই ‘কপি’ ক্যাসেট থেকে। পরে ওদের ক্যাসেট থেকে আরো মানুষ। দশ হাত ঘুরে অনেক সময় ওদের একটা কপি এসে পড়তো আমার হাতে। বুঝতেই পারছেন কি অবস্থা ওই রেকর্ডিংয়ের। ফ্যাকাসে। ভলিউম অনেক লো। বেড়ে গেছে নয়েজ। ড্রামের বিট যেতো ফেটে ফেটে। এখন, গান কপি করেন পেন ড্রাইভে। হাজার হাত ঘুরে এলেও সোর্স থাকছে আগের মতো। অবিকল।

Last updated