পার্সোনাল অডিওফাইল সেটআপ

আমরা সময় পেলেই গান শুনি। গান জিনিসটা আসলে জড়িয়ে আছে আমাদের সবার সাথে। তবে এই গানকে মানে যিনি গানটা করেছেন অথবা যিনি গানটা রেকর্ডিং করেছেন, তাদের মনের মতো করে যদি শুনতে পাওয়া যেত? অর্থাৎ উনারা যেভাবে চেয়েছেন সেভাবে যদি শুনতে পেতাম? এটার একটা উপায় হতে পারে। যখন গানটা রেকর্ডিং হয়, তখন সেই রেকর্ডিং স্টুডিওতে সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার যেভাবে গানটা শুনেছেন, তার পাশে বসে সেভাবে যদি গানটা শুনতে পেতাম?

যখন একজন রেকর্ডিং স্টুডিওতে গানটি রেকর্ড করেন, তখন প্রতিটা ইন্সট্রুমেন্টের লেভেলের উপরে সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার অনেক কাজ করেন। সেইসব ইন্সট্রুমেন্টগুলোর আউটপুট তারা বের করে নিয়ে আসেন তাদের মনিটরিং হেডফোন অথবা মনিটরিং স্পিকারে। স্টুডিওতে রেকর্ডিং যেভাবে হয় সেই জিনিসটাকে হুবহু বাসায় ‘রিপ্রোডিউস’ করা অনেক ঝামেলার। সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আমাদের স্পীকার গুলোতে। আমাদের সাধারন স্পিকারগুলো শব্দের বিশাল রেঞ্জ মানে ২০ হার্টজ থেকে ২০ হাজার হার্টজ ঠিকমত ‘রিপ্রোডিউস’ করতে পারে না।

এছাড়াও আমাদের স্পীকারগুলোর শব্দগুলো বের হয়ে বাসার দেয়ালে যেভাবে রিফ্লেক্ট করে, সেখানে অনেক শব্দই একে অপরের সাথে লেগে বাদ হয়ে যায়। ফলে শব্দগুলো অনেক সময় যেভাবে শোনা উচিত সেভাবে সোনা হয় না। বাসার দেয়ালে ঠিকমত সাউন্ড প্রুফিং টেকনিক ব্যবহার করলে শব্দের ব্যপারগুলো অনেকাংশে ঠিক করা যায়। তবে সেই সাউন্ডপ্রুফিং টেকনিক অনেক খরচের ব্যাপার। সে দিক থেকে মনিটরিং হেডফোনে গান শোনার খরচ অনেকটাই কম।

১0 হাজার ডলারের স্পিকারের আউটপুট কিছুটা কাছাকাছি নিয়ে আসতে পারে ৩০০ ডলারের একটা হেডফোন। এই হেডফোনগুলোকে আমরা বলি মনিটরিং বা রেফারেন্স হেডফোন। মানে এই হেডফোনগুলো দিয়েই সাউন্ড ইঞ্জিনিয়াররা রেকর্ডিং করেন, অথবা এগুলোই শব্দের জন্য রেফারেন্স হিসেবে কাজ করে। এখানে শব্দের ‘বেজ’, ‘মিড্’ বা ‘ট্রেবল’ যেভাবে রেকর্ডিং হয়েছিল সেভাবেই আবার ‘রিপ্রোডিউস’ করা হয়। আজকে আমরা ছোট্ট একটা রেফারেন্স অডিওফাইল সেটআপ নিয়ে কথা বলবো।

‘অডিওফাইল’ মানে হচ্ছে একদল প্রযুক্তিপ্রেমী মানুষ যারা বা যে যন্ত্রগুলোর সাহায্যে যেভাবে শব্দের ‘ডাইনামিক হাই-ফিডেলিটি’ অংশগুলো ঠিকমত নিজের এনভায়রনমেন্টএ ‘রিপ্রোডিউস’ করতে পারে। যেভাবে সেই গায়ক অথবা সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার চেয়েছেন আপনাকে শুনতে। একে আমরা অনেক সময় বলি বিট পারফেক্ট মোড। তারমানে গানের ডিজিটাল অংশের প্রতিটা ‘বিট বাই বিট’ কানে আসতে হবে একদম ‘পারফেক্ট’ ভাবে। যে কোন ধরনের অডিওফাইল সেটআপ এর শুরুতেই থাকে দুর্দান্ত অডিও সোর্স । সোর্সগুলো সাধারণত এমপিথ্রি ফাইল ফরম্যাটে হয়না, বরং ষ্টুডিও কোয়ালিটি আনকম্প্রেসড ফাইল ফরম্যাটগুলো ব্যবহার হয়ে থাকে।

বর্তমানে মোবাইল ফোনগুলো পিসি থেকে বেশ ক্ষমতাশালী হওয়ায় এখানে আমরা একটা মোবাইল ফোন ব্যবহার করছি। মোবাইল ফোনের ইউএসবি পোর্ট দিয়ে শব্দগুলো ডিজিটালি বের হয়ে যাচ্ছে আমাদের ‘ড্যাক’এ। ‘ড্যাক’ হচ্ছে ডিজিটাল টু এনালগ কনভার্টার। এর কাজ হচ্ছে শব্দটাকে ডিজিটাল ফাইল ফরম্যাট থেকে হুবুহু এনালগএ কনভার্ট করা, যেভাবে শুরুতে এনালগ ফরম্যাট মানে থেকে গানটা রেকর্ডিং হয়েছিল। মোবাইল ফোন থেকে কালো তার দিয়ে সেটা বের হয়ে যাচ্ছে ডিজিটাল ইনপুট দিয়ে। ড্যাকের এই ডিজিটাল ইনপুট দিয়ে ড্যাকে ঢুকে সেটা পাল্টে যাচ্ছে এনালগ সাউন্ড সিগনেচারে।

সেই শব্দগুলো বের হচ্ছে ড্যাকের এনালগ আউটপুট দিয়ে। ড্যাকের এনালগ আউটপুট সাউন্ড সিগনেচারটা বেশ কম শক্তিশালী হয়। এটা এখানে বেরুচ্ছে লাল তার দিয়ে। সেই সাউন্ড সিগনেচারকে কিছুটা ‘অ্যাপ্লিফাই’ করতে ড্যাক থেকে এনালগ আউটপুট দিয়ে ঢুকেছে হেডফোন অ্যাম্প এ। আমাদের এই হেডফোন অ্যাম্প শব্দকে হেড ফোনের জন্য উপযোগী করে পাঠিয়ে দিচ্ছে আমাদের শেষ ডিভাইস এই হেডফোনে। এখানে হেডফোন হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে একটা রেফারেন্স ধরণের হেডফোন, যার কাজ হচ্ছে শব্দকে ঠিকমতো রিপ্রোডিউস মানে তৈরী করা - যেভাবে রেকর্ডিং স্টুডিওতে গানটা রেকর্ড হয়েছিল। বলতে গেলে ‘অডিওফাইল’ হচ্ছে একটা চমৎকার হবি। ইলেকট্রনিক্স, ডিজিটাল কমিউনিকেশন এবং শব্দের পাশাপাশি ভবিষ্যৎ প্রযুক্তির অনেক কিছুই জানা হয় এখানে। সামনে আসছি শব্দের আরও বেশ কিছু ব্যাপার নিয়ে।

গান শোনার ‘ড্যাক’ নিয়ে অনেক কথা হয়েছে আগে। গান এখন সব পাওয়া যায় ডিজিটাল মিডিয়াতে। মানে সেটা সিডি, এমপিথ্রি প্লেয়ার হোক আর টিভি হোক, সব জায়গায় রেকর্ডিং আমরা রেখে দিচ্ছি ডিজিটাল মিডিয়াতে। আমাদের মোবাইল ফোনেও একি অবস্থা।

মজার কথা হচ্ছে গান হচ্ছে অ্যানালগ জিনিস। ফ্রিকোয়েন্সির হিসেব। সেকারনে ওই গানকে ডিজিটাল থেকে যে সবচেয়ে ‘ন্যাচারাল’ ভাবে মানুষকে শোনাতে পারবে সেই এখানে নামকরা। যেমন এ মুহুর্তে আমি শুনছিলাম একটা যন্ত্র যেখানে ‘ড্যাক’ হিসেবে দেখছি স্যাবরের ES9018K2M এর চিপসেট। অসাধারণ একটা ‘ড্যাক’, মোবাইল ডিভাইসের জন্য তৈরি।

Last updated