কিভাবে এখানে এলাম?
প্রথম গল্প
১৯৮৩ সালের কথা। ক্যাডেট কলেজে গিয়ে শুরুতে মন কিছুটা খারাপ হলেও পরে বিশাল একটা লাইব্রেরী দেখে মন ভালো হয়ে গেল। লাইব্রেরি ক্লাসের পাশাপাশি সময় পেলেই ছুটতাম বই ইস্যু করতে। অনেক বই একসাথে ইস্যু করার ধারনাটা পেয়েছিলাম আদমজী থেকে। মজার কথা হচ্ছে, লাইব্রেরির একটা বিশাল অংশ জুড়ে ছিল ইংরেজি বইয়ের সংগ্রহ। এরমধ্যে প্রযুক্তি বিষয়ক বইগুলো দেখছিলাম, হয় সেগুলো 'এমআইটি প্রেস' অথবা 'ম্যাকগ্র হিলসে'র। সেখানেই পেলাম একই সিরিজের তিনটা বই। 'ম্যান মেশিন'। মানে মানুষ কিভাবে মেশিনের সাহায্য নিয়ে বিভিন্ন বুদ্ধিবৃত্তিক কাজ শুরু করেছিল সেটার কিছু স্ন্যাপশট দেখছিলাম ওই বইগুলোতে।
দ্বিতীয় গল্প
আগের বইয়ে কিছুটা লিখেছিলাম ব্যাপারটা নিয়ে।
তৃতীয় গল্প
২০ বছর আগের কথা। নিউ ইয়র্কে নেমেই চলে গেলাম পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ‘ইউজড’ বুক স্টোর, স্ট্র্যান্ডএ। তখনকার ব্র্যান্ডিং ছিল তাদের কাছে যত বই আছে সবগুলো বই পাশাপাশি সাজিয়ে রাখলে ৮ মাইল লম্বা বইয়ের সারি হবে। ‘এইট মাইলস অফ বুকস’, এখন ২৫ মাইলে দাড়ালেও ডাউনটাউনের ব্রডওয়েতে এই বইয়ের দোকান এখনো মাথা খারাপ করার মতো। প্রথম দিনে বাইশটা মতো বই নিয়ে এলেও পরের দিন সেই বইয়ের সংখ্যা এসে দাঁড়ালো ৩৫এ। সেদিন এক ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া উচ্ছল একটা মেয়ে এসে আমাকে জিজ্ঞাসা করলো কোন সাহায্য লাগবে কিনা? সচরাচর এর মত মুখে স্মিত হাসি টেনে তাকে তাড়িয়ে দিতে চাইলাম। থ্যাঙ্ক ইউ, আই এম গুড। শুনে চলে গেল আরেক কাস্টমারের সাপোর্টে। আমিও ডুবে গেলাম বই পড়তে। শেষ করতে হবে কয়েকটা বই। সেদিনই।
আসল কথা হচ্ছে, অনেক বই যেহেতু কিনতে পারব না, মানে বাংলাদেশ টেনে আনা সমস্যা বলে ওখানেই তিন-চারদিন বসে বেশ কিছু বই পড়ে ফেলতাম প্রতিদিন - ‘এলআইআর’ ধরে লং আইল্যান্ডে বন্ধুর বাসায় ফেরার আগে। দুই ঘন্টা পর ওই মেয়ে এসে হাজির আবারো। কাহিনী কি? "এই বইটা তুমি দেখতে পারো, আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে।" বইটা হাতে নিলাম। উইলিয়াম গিবসনের ‘নিউরোমান্সার’। সাইবারনেটিক্স নিয়ে। সেই মেয়েটার সাথে প্রায় কিছুদিন যোগাযোগ ছিল পরে, বিশেষ করে ওই বইটা নিয়ে, তবে সময়ের অভাবে যোগাযোগ রাখা হয়নি শেষে। আজকে ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা’ নিয়ে যতটুকু আমার ধারণা হয়েছে, তার একটা ভালো স্টেপিংস্টোন ছিল সেই বইটা। একটা মাথা খারাপ করার মতো বই বটে। জাপান আমার পছন্দের একটা জায়গা, এই বইটার জন্য।
Last updated
Was this helpful?