কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, আমাদের ভবিষ্যৎ
নীতিনির্ধারণী আলাপ, বাংলাদেশ এবং আমরা
Last updated
Was this helpful?
নীতিনির্ধারণী আলাপ, বাংলাদেশ এবং আমরা
Last updated
Was this helpful?
The best time to plant a tree was 20 years ago. The second best time is NOW.
– Chinese proverb
কয়েক হাজার বছরে মানব সভ্যতা এগিয়েছে অনেক। উৎকর্ষতা, অপটিমাইজেশন এবং দক্ষতা হচ্ছে এই শতকের মূল মন্ত্র। সেটার প্রয়োজনে এসে যোগ দিয়েছে 'কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা'। মানুষের সহজাত বুদ্ধিমত্তার সাথে যান্ত্রিক বুদ্ধিমত্তার যোগসূত্র না থাকলে পরবর্তী শতকে যাওয়া দুস্কর। নতুন ড্রাগ ডিসকভারি, দুরারোগ্য রোগ থেকেমুক্তি, আরবান প্ল্যানিং, মাস ট্রানজিট সিস্টেম ম্যানেজমেন্ট, ইত্যাদি ইত্যাদি ব্যাপারগুলো অনেকটাই যৌথ উদ্যোগ, এ মুহুর্তে। বিশেষ করে মানুষের কায়িক/মানসিক পরিশ্রম কমাতে।
এই ব্যাপারটা নিয়ে অনেক ধরনের ধারণা পাচ্ছিলাম গত এক দশক ধরে। তবে জিনিসটা যখন 'রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট' ধাপ পেরিয়ে চলে এসেছে 'গুরুতর' ব্যবহারিক পর্যায়ে তখন 'কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা' থেকে সুবিধা না নিতে পারলে পিছিয়ে পড়বো আমরা। গত কয়েক বছরে বেশ কিছু প্রযুক্তি যেমন 'ডিপ লার্নিং', পাশাপাশি আমাদের হাতে এত বেশি ডাটা এসেছে সেটা থেকে প্রজ্ঞা না নিতে পারা অদক্ষতার মধ্যে পড়ে যায়। 'এনলাইটেন্ড' অর্থনীতিগুলোতে অদক্ষতা এখন শাস্তির পর্যায়ে পড়ে।
আমাদের হাতে এখন এত বেশি ডাটা, স্টোরেজের দাম কমে যাওয়া এবং কম্পিউটিং প্রসেসিং ক্ষমতার প্রাচুর্যতা মানব সভ্যতাকে দিচ্ছে জ্ঞানের নতুন দিগন্ত। ডাটা এখন 'স্ট্র্যাটেজিক অ্যাসেট' হিসেবে পরিগণিত হাওয়ায় অনেক দেশ এবং কোম্পানিগুলোর একক আধিপত্য বিপদে ফেলছে আমাদের মত দেশগুলোকে। জাতীয় অনেক সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করছে যেহেতু আমাদের অনেক ডাটা আছে তাদের কাছে। এখন আমরা বুঝতে না পারলেও কয়েকবছর পরে এটার প্রভাব পড়বে জাতীয় অর্থনৈতিক 'গ্রোথে'।
ডাটা যেখানে একাধারে সম্ভাবনা দিচ্ছে সেখানে ডাটাকে ঠিকমতো ব্যবহার করতে না পারায় বিপদে ফেলছে একটা বিশাল জনগোষ্ঠীকে। ডাটার ব্যাপারে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত বাঁচিয়ে দিতে পারে অনেক বাড়তি খরচ। আমাদের মতো দেশগুলোতে ডেটার ব্যবহার ঠিকমতো না হবার পেছনে একটা বড় কারণ হচ্ছে জাতীয় সংস্থাগুলো কিভাবে ডেটাকে জনস্বার্থে ব্যবহার করবে সে ব্যাপারে ধারণা না থাকা। অনেক সংস্থা মনে করছেন এই পাবলিক (জনগনের ব্যক্তিগত ডেটা বাদ দিয়ে) ডেটা আসলে তাদের সংস্থার ডেটা।
সবাই যখন বুঝে গেছে বিশাল পরিমান ডেটাতে এক্সেসই বর্তমান কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার চাবিকাঠি, সেখানে নলেজ ইকোনমিগুলো নিয়েছে 'ওপেন ডেটা এক্সেস ইনিশিয়েটিভ, যাতে সরকারি ডেটাকে ব্যবহার করে দেশের সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারে উদ্ভাবনী কোম্পানি, অ্যাকাডেমিয়া, অথবা তাদের 'স্পিন-অফ' ভেঞ্চারগুলো। সরকারের পাবলিক ডেটা (প্রাইভেট ডেটা নয়) এবং উদ্ভাবনী কোম্পানিগুলোর পার্টনারশীপ সমাধান করছে সরকারি সার্ভিস ডেলিভারির সমস্যাগুলোকে। তবে অনেক দেশের সরকার ব্যবহার করুক অথবা না করুক, ডাটার ব্যবহার ছড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিতে যাদের অপারেশন রয়েছে পৃথিবীজুড়ে। সেখান থেকে শিখছে বাকি কোম্পানিগুলো।
ডেটার ভালো ব্যবহার যেহেতু প্রাইভেট সেক্টরে বেশি, অনেক জায়গায় জনস্বার্থে ডেটার 'ফেয়ার এক্সেস' যেখানে কোম্পানিগুলো (সরকারের নীতিমালা মেনে) গ্রাহকের অনুমতিতেই দিতে পারে আরো 'পার্সোনালাইজড' সার্ভিস। বিশেষ করে, নাগরিকসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে সরকারের কাছে কেন্দ্রীয়ভাবে জনগনের সঠিক প্রাপ্যতা/সনাক্তকরণ প্রসেস ঠিকমতো তৈরি হলে কমে যাবে সামাজিক অসঙ্গতি। উন্নতদেশগুলো ভিসা সার্ভিসগুলোকে প্রাইভেট সেক্টরে ছেড়ে দেয়া সেরকম একটা ভালো উদাহরণ।
অনেক ক্ষেত্রে দেশগুলোর ডেটা নিয়ে সেরকম ধারণা না থাকার ফলে সুযোগ নিচ্ছে বড় বড় ইনফ্রাস্ট্রাকচার/কনটেন্ট প্রোভাইডাররা। ফলে বিশাল পরিমানে গ্রাহক/পাবলিক ডেটা নিয়ে তারা হয়ে যাচ্ছে মহীরুহ। অনেক ক্ষেত্রে তাদের সাথে পেরে ওঠে না সেই দেশগুলো। এক্ষেত্রে ডেটা প্রোটেকশন, 'ডেটা পোর্টেবিলিটি', 'ডেটা ট্রাস্ট' নীতিমালাগুলো ঠিকমতো কাজে লাগাতে পারলে ডেটার সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়। প্রতিযোগিতা/বাজার সংস্থাও কাজ করেছে এখানে অনেক দেশে। এদিকে ডেটার সঠিক ব্যবহার (ডেটার প্রিজুডিস) নিশ্চিত করতে না পারলে সরকারেও সমস্যা হয় বিভিন্ন স্পেসিফিক গোষ্ঠির ওপর। নাগরিকসেবার অসমতা তৈরি হয় তখন। হয়তোবা স্পেশাল ট্রিটমেন্ট পায় কিছু জনগোষ্টি। সেকারণে নীতিমালার বাস্তবায়ন জরুরি।
সম্ভব সবই। প্রায় তৈরি হয়ে আছে প্রয়োজনীয় ডিজিটাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার। দরকার আসল মাইন্ডসেট, এবং একটা কমিটেড টীম।