কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পেছনে ড্রাইভিং ফ্যাক্টরগুলো কী কী?
A year spent in artificial intelligence is enough to make one believe in God.
– Alan Perlis
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পেছনে এত এক্সাইটমেন্ট, আকাশচুম্বী উচ্চাশা, বিলিয়ন ডলার ইনভেস্টমেন্ট, এগুলোর পেছনে কি কি ফ্যাক্টর কাজ করছে?
১. প্রথমত: প্রচুর ডেটা
আমাদের হাতে এখন এতো ডেটা সেটা একযুগ আগেও চিন্তা করতে পারিনি আমরা। আমাদের প্রতিটা ডিভাইস প্রতি সেকেন্ডে এত লগ জেনারেট করছে, এখন এগুলোই এখন আমাদের জন্য ট্রেনিং ডেটা। আজকে নতুন প্রযুক্তির ‘গুগল ট্রেন্ডিং’ জানার জন্য আইটেম হিসেবে ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা’ এবং ‘মেশিন লার্নিং’ থাকলেও গত ১০ বছরে জয়জয়কার আইটেম ছিল “বিগ ডেটা”। এর অর্থ হচ্ছে আমরা গত দশক ধরে প্রচুর ডেটা জমিয়েছি ভবিষ্যতের জন্য। কিছুটা বুঝে অথবা না বুঝে হোক, এই বিগডেটা কাজে লাগছে এখন। এর পাশাপাশি এই মুহুর্তে আরো প্রচুর ডেটা যোগ হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এখন তো ক্লাউডের জয়জয়কার।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কাজ করতে গিয়ে দেখলাম যখন আমাদের হাতে প্রচুর ডেটা আসে তখন সেটাকে কিছুটা ‘সেল্ফ লেবেলড’ ডেটা বলে মেশিন লার্নিং মডেলকে ট্রেইন করতে পারি। ব্যাপারটা এমন যে এতো এতো ডেটা, মেশিন লার্নিং মডেল বিভিন্ন ধরনের ডেটাকে ক্লাস্টারিং করে - কোন ডেটা কিসের জন্য প্রযোজ্য সেটাও বলে দিতে পারছি এখন। মেশিন লার্নিং মডেল আগেও ১৯৫০-৬০ সালের দিকে ছিল তবে সেগুলো ঠিকমতো কাজ করতে পারেনি ডেটার অভাবে।
এখন একটা সাধারন অ্যালগরিদম অসাধারণ পারফরম্যান্স দেখাতে পারছে শুধুমাত্র প্রচুর ডেটার কারণে। আমার নিজের অভিজ্ঞতায় মানে নিজের চোখে দেখছি ভালো প্রসেসর অথবা এর সাথে অ্যাসোসিয়েটেড অ্যালগরিদম যতটা পারফরম্যান্স দেখাতে পারছে তার থেকে অনেক বেশি অবিশ্বাস্য আউটকাম দেখাচ্ছে যখন যোগ করছি প্রচুর ডেটা।
২. ডেটা স্টোরেজের সহজলভ্যতা
ডেটার পাশাপাশি প্রচুর ডেটা স্টোর করার ডিভাইসগুলোর দাম কমেছে লাফিয়ে লাফিয়ে। পানির দামে সবাই কিনতে পারছে স্টোরেজ, তৈরি হচ্ছে বিশাল বিশাল ষ্টোরেজ এরিয়া নেটওয়ার্ক। আমার বাসায় কয়েকটা ‘নেটওয়ার্ক অ্যাটাচড স্টোরেজ’ বলে দেয় এর সহজলভ্যতা। মানে বাসায় আমরা তৈরি করতে পারছি নিজস্ব ক্লাউড। RAM এর সহজলভ্যতাও আরেকটা দিক।
পোর্টেবল স্টোরেজের দাম এবং এর ক্যাপাসিটি যেভাবে আনুপাতিকভাবে কমছে এবং বাড়ছে, সেটা কিন্তু প্রমাণ করে এই ট্রেন্ডকে। এর পাশাপাশি ক্লাউড স্টোরেজের সহজলভ্যতা মানুষকে তার সব ডেটা ‘লোকাল’ না রেখে ক্লাউডে রাখার সিদ্ধান্ত প্রমাণ করে স্টোরেজের প্রসার।
৩. প্রসেসিং স্পিড এবং ডেটাকে প্রসেস করার জন্য ‘স্পেশালাইজড’ প্রসেসর
গত কয়েক দশকে ‘মুরস ল’ ভেঙ্গে সনাতন আর্কিটেকচার এতটাই পাল্টে গেছে সেখানে প্রসেসিং স্পীড এখন পৌঁছে গেছে অন্য লেভেলে। প্রসেসিং স্পীড বাড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন কোর মানে একটা প্রসেসর এর মধ্যে অনেকগুলো আলাদা আলাদা কোরকে নিয়ে গেছে নতুন উচ্চতায়। আগে মেইনফ্রেম কম্পিউটার যেভাবে কাজ করতো তার থেকে ভালো কাজ করতে পারছে অনেকগুলো সস্তা পার্সোনাল কম্পিউটার মিলে একেকটা ক্লাস্টার।
তবে আসল এডভান্সমেন্ট এসেছে বিশেষ করে ‘ডিপ লার্নিং’ এর ক্ষেত্রে যেখানে আমরা হাইজ্যাক করেছি গেমিং ইন্ডাস্ট্রি। ডিপ লার্নিং এর জন্য যে ধরনের অংক দরকার বিশেষ করে ‘ম্যাট্রিক্স মাল্টিপ্লিকেশন’ এ গ্রাফিক্যাল প্রসেসর এর পারফর্মেন্স আমাদের মাথা খারাপ করে দিয়েছে। ভিডিও গেমসের জন্য শুরুতে এই গ্রাফিক্যাল প্রসেসর বা ‘জিপিইউ’ যেভাবে ব্যবহার হতো সেখানে এই প্রসেসরগুলো ডিপ লার্নিং এর ম্যাট্রিক্স মাল্টিপ্লিকেশনে অসাধারণ সাফল্য দেখিয়েছে।
৪. অ্যালগরিদম এর কিছু বাড়তি ফিচার
আমরা মেশিন লার্নিং শিখতে প্রথমে যে জিনিসটা নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করি সেটা হচ্ছে ‘অ্যালগরিদম’। সত্যি বলতে আমরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জন্য যে অ্যালগরিদমগুলো ব্যবহার করি তার খুব একটা পরিবর্তন আসেনি গত কয়েক দশকে। পৃথিবীতে বেসিক মানে আসল মেশিন লার্নিং /ডিপ লার্নিং অ্যালগরিদম এখনো হাতে গোনা যায়। তবে এর মধ্যে আমরা সেগুলোর সাথে বেশ কিছু চমৎকার ফিচার যোগ করেছি যা সেই অ্যালগরিদমগুলোকে আলাদা মাইলেজ দিয়েছে। সেটার উদাহরণ হিসেবে ‘ব্যাকপ্রপাগেশন’ নিয়ে আলাপ করলে বোঝা যায় এই ব্যাপারটা কতটুকু এগিয়ে দিয়েছে আমাদের ডিপ লার্নিং এর শেখাতে। ‘এরর কারেকশনে’র জন্য এই ফিডব্যাক মেকানিজম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে এগিয়ে দিয়েছে অনেকখানি।
Last updated
Was this helpful?