স্ট্যান্ডিং অন দ্য সোল্ডারস অফ জায়ান্টস
If I have seen further, it is only by standing on the shoulders of giants.
-- Isaac Newton
বই কেনা আমার নেশা। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গেলে আলাদা কথা। ৪৬ কেজি ওজন সীমার প্রায় ৩০ কেজি চলে যায় বইয়ে। আমাজনের পাশাপাশি পুরোনো বইয়ের দোকানগুলোও কম চমকপ্রদ নয়। বইয়ের মধ্যে মানুষের আঁকিবুকি ওই অজ্ঞাতনামা মানুষটার সাথে একটা সম্পর্ক তৈরি করে দেয়।
কি বললেন? বইগুলো কিনে পড়ি কিনা? তার উত্তর আরেকদিন।
ঠিক ধরেছেন। মেশিন লার্নিং নিয়ে প্রায় ৫০টার মত বই কিনে ফেলেছি এর মধ্যে। আসলে নেশা এবং পেশা যদি এক হয়ে যায় তাহলে আসলে কিছু করার থাকে না। আর - সামান্য কিছু বই তো। বাংলাদেশি টাকায় হয়তোবা একেকটা বইয়ের দাম পড়ে পঁচিশশো করে। জ্ঞানের জন্য এই টাকা আসলে কোন ব্যাপারই না। তবে এটাও ঠিক এই প্রযুক্তিটার ব্যাপারে বেসিক কিছু ধারণা দেওয়ার জন্য এতগুলো বইয়ের দরকার ছিল না। আমার বই কেনার পেছনে মোটিভেশন অন্য।
এই পঞ্চাশ বছরের দ্বারপ্রান্তে এসে আমি যে কয়েকটা জিনিস বুঝতে পেরেছি তার মধ্যে বড় একটা হচ্ছে “অন্যের চোখে একটা জিনিসকে দেখা”। এই ব্যাপারটা আমি পেয়েছি বুড়ো বয়সে ‘পিএইচডি রিসার্চ’ করতে গিয়ে। এই পিএইচডি রিসার্চের একটা বড় অংশ হচ্ছে অন্যের রিসার্চ লিটারেচার রিভিউ করা। অন্য মানুষের একই বিষয়ে তাদের রিসার্চগুলো যখন রিভিউ করছিলাম তখন দেখলাম বেশ কিছু জিনিসপত্র - ভিন্ন আঙ্গিকে। বেশিরভাগ সময় দেখতাম উনারা় ওই সমস্যাটাকে যেভাবে দেখছেন বা ‘ক্র্যাক করার চেষ্টা’ করছেন সেভাবে আমি হয়তো চিন্তাই করিনি। সেটাই স্বাভাবিক।
পৃথিবীর যেকোন সমস্যাকে যখন সবাই একভাবে দেখেন তখন সেটা থেকে খুব একটা ভালো জিনিস পাওয়া যায় না। সে কারণে উন্নত বিশ্বগুলোতে ভিন্নমতের প্রাধান্য দেয়া হয়। এবং সেটার ফলাফল তারা পায়। একই সমস্যা কিন্তু সেটার দেখার ভঙ্গি বিভিন্ন হওয়ায় সেটার সমাধান এগিয়ে যায় তাড়াতাড়ি। ‘নানা মুনির নানা মত’ হলেও সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন আঙ্গিক যেকোনো সমস্যাকে খুব দ্রুত সমাধানে নিয়ে আসে। এটা আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা।
মেশিন লার্নিং নিয়ে নানা লেখকের বিভিন্ন বই পড়তে গিয়ে তাদের ধারণা সম্পর্কে আঁচ পাওয়া যায়। অল্প সময়ের মধ্যে। সেটাই হয়তোবা আমার শক্তি। অনেক কিছু দেখে ফেলেছি এর মধ্যে। ওই একই বিষয় নিয়ে যখন আর একজন ১০-২০ বছর ধরে কাজ করছেন, তাদের সেই পার্সপেক্টিভ আপনি পেয়ে যাচ্ছেন অল্প সময়ের মধ্যে। আপনি তাদের ধারণার পুরো গভীরতা না পেলেও যে পার্সপেক্টিভটা পাবেন সেটাই বা কম কিসে। চল্লিশটা লেখকের ভিন্ন ভিন্ন ইউনিক অভিজ্ঞতাই বা কেন ছেড়ে দিব আমি?
দ্বিতীয় কনটেক্সটটা পেয়েছি প্রিয় বৈজ্ঞানিক আইজাক নিউটন থেকে। উনি একটা অসাধারণ কথা বলেছিলেন ১৬৭৫ সালে। কোটেশন হিসেবে সেটা দিলেও উনার কথাটাই হুবহু তুলে দিচ্ছি এখানে। "If I have seen further - it is by standing on the shoulders of Giants." মাথা খারাপ করে ফেলার মত একটা কথা। উনি বলতে চেয়েছেন, আমি যদি আজ বেশি জেনে থাকি - সেটা সম্ভব হয়েছে আমার আগের ডিসকভারিগুলো থেকে। উনি উনার আগের আবিস্কারগুলোকে ভিত্তি করেই এগিয়েছেন নতুন আবিষ্কারগুলোর দিকে। উনি যদি উনার আগের আবিষ্কারগুলোকে বিশ্বাস না করতেন, অথবা যথাযথ সম্মান না দিতেন, তাহলে উনাকে সবকিছু করতে হতো কেঁচে গণ্ডূষ করে।
ধরুন, আজকে আমাকে নতুন করে মাইক্রোপ্রসেসরকে আবিষ্কার করতে হলে আমার লাইফ টাইমে কখনোই বর্তমান প্রজন্মের ‘জিপিউ’ ব্যবহার করতে পারতাম না। আমি একটা মাইক্রোপ্রসেসরের ভেতরে বিলিয়ন বিলিয়ন ট্রানজিস্টারকে বেজলাইন ধরে নতুন কিছু আবিষ্কার করার চিন্তা করতে পারি। তার মানে আগের আবিষ্কারগুলোর ঘাড়ে পা রেখে আমরা সামনের আবিষ্কারগুলোকে ‘এক্সপ্লোর’ করতে পারি। আমার অভিজ্ঞতায় দেখেছি (বিশেষ করে বাংলাদেশে) আমাদের পূর্বসূরিদের কার্যক্রমকে অনেক সময় 'এনডোর্স' করি না বলে উনাদের প্রজ্ঞাগুলোকে আমাদের কাজে ব্যবহার করতে পারি না। সেকারণে উৎকর্ষের আসল সুবিধা নিতে পারিনা আমরা।
আজকে পৃথিবীতে যত প্রযুক্তির উৎকর্ষ/দক্ষতা এসেছে তার শতভাগই এসেছে আগের আবিষ্কারগুলোর উপর ভরসা করে। সে কারণে এই মেশিন লার্নিং নিয়ে যারা গত ২০ বছর ধরে কাজ করছেন তাদের ধারণাগুলোকে যথাযোগ্যভাবে এন্ডোর্স করে এগোনোটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। গত কয়েক বছরে এই মেশিন লার্নিং গুরুদের বইগুলো পড়ে আমার এই উপলব্ধি হয়েছে। উনারা যে প্রজ্ঞা পেয়েছেন গত ১০/২০ বছরে ধরে - তার ছিটেফোটা হয়তোবা আমরা পাচ্ছি একদিনের এক বসায়, ওই বইটা হাতে নিয়ে। সব প্রজ্ঞাই কিউমুলেটিভ, আস্তে আস্তে জমে। হাজার বছর ধরে। হাজার বছর আছে প্লেটো কি বলেছিলেন সেটার প্রযোজ্যতা আসে যখন সেটার কনটেক্সচুয়ালাইজেশনটা আসে বর্তমান সময়কে ঘিরে।
Last updated
Was this helpful?